করোনাভাইরাস নিয়ে উৎকণ্ঠার শেষ নেই। এর মধ্যে আবার কথা উঠেছে দ্বিতীয় ঢেউয়ের। টানা ১১ দিন দিনে এক হাজার আটশ জন আক্রান্ত, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। রোগী শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে।
ইউরোপ আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশেগুলোতে এরইমধ্যে দ্বিতীয় ঢেউ চলে এসেছে। বাংলাদেশে সরকার বলছে, দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, দ্বিতীয় ঢেউ আসলে কী? তার প্রস্তুতিই বা কেমন হওয়া উচিত?
এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে নিউজবাংলার সঙ্গে অনলাইনে যুক্ত হয়েছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী।
শনাক্ত, মৃত্যু দুটোই বেড়েছে। দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় কি এসে গেল?
দ্বিতীয় টেউ এখনও শুরু হয়নি। এটা শুরু হতে আরও ১০ থেকে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। কেনো দেশে করোনা শানাক্তের হার পাঁচ শতাংশ নিচেই নামতে হবে এবং তিন সপ্তাহ পর্যন্ত এই হার থাকতে হবে। এমন পরিস্থিতি হলে করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ধরা হয়।
তবে বাংলাদেশে এই পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। তাই প্রথম ঢেউ শেষ হয়েছে এটা বলা যাবে না। বর্তমান যে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে এটাকে করোনা প্রথম ঢেউয়ের ঊর্ধ্বগতি বলতে পারি।
এখন করণীয় কী?
সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে হবে। মাস্ক পরার জন্য জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। প্রচার অভিযান শুরু করতে হবে। এরপরেও যারা মাস্ক পরবে না তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
যাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য কম। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে, তাদেরকে বিনামূল্যে মাস্ক দিতে হবে।
যারা ভাসমান জনগষ্ঠী তাদেরকে তিন স্তরের কাপড়ের মাস্ক পরতে হবে। সেটা ধোয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে খরচ কম হবে।
নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে। বর্তমানে করোনা পরীক্ষা করতে দুই থেকে তিনদিন সময় লেগে যায়। এত সময় লাগার কারণে অনেক মানুষ পরীক্ষা করাতে আসে না। পরীক্ষা জন্য যে টাকা নিতে হয় সেই টাকা বাতিল করে আগের মতোই বিনামূল্য পরীক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালগুলোতে রোগী ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে।
যদি রোগীর সংখ্যা আরও বাড়ে তাহলে সেবা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসক ও নার্সদের উৎসাহ দিতে হবে কাজে। হাসপাতালগুলোতে যেসব যন্ত্রপাতি সংকট রয়েছে সেগুলোও দূর করতে হবে। আইসিইউ সংখ্যা বাড়াতে হবে।
সংক্রমণ আবার পিকে উঠলে লকডাউনের প্রয়োজন হবে কি?
দ্বিতীয় টেউ প্রতিরোধে লকডাউনের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে কিছু কিছু কাজ করতে হবে। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলো বন্ধ, শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো অনুষ্ঠানে সংখ্যা বাড়িয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরুত্ব মানা হচ্ছে না। সামাবেশ হচ্ছে, বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে।
আমাদের যতটা সতর্ক হওয়া দরকার, ততটা হচ্ছি না। এ জন্য সমন্বয় দরকার। সামজিক অনুষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই সবকিছু পরেও যদি করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয় তাহলে তখন লকডাউনের কথা চিন্তা করব আমরা।
একটি জিনিস সবাইকে মনে করাতে হবে জীবনকে কার্যকরভাবে সচল রাখতে হবে। এবার স্বাস্থ্যবিধি মানার উপরে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে।
করোনা ভাইরাসের টিকা কবে পাবে বাংলাদেশ?
এরই মধ্যে সরকার তিন কোটি টিকা আনার জন্য চুক্তি করেছে। আন্তর্জাতিক টিকাদান সংস্থা গ্যাভি থেকেও প্রায় সাত কোটি টিকা পাওয়ার আশা করছে সরকার। তাহলে প্রায় ১০ কোটি টিকা আমরা নিশ্চিত করতে পারছে।
এবার আসুন আমরা কিভাবে টিকা বিতারণ করব। আগে পাবেন স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রবীণরা। তবে ভ্যাকসিন পাওয়া আগ পর্যন্ত আমরা সামাজিক ভ্যাগসিন অর্থাৎ স্বাস্থ্যবিধি মানার উপরে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। নিয়মিত হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরুত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এই তিনটির উপরে জোর দেয়া এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব।
শীতের সঙ্গে করোনা সংক্রমণ বাড়ার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার কারণ কী?
শীতের সময় তাপমাত্রা কমে যায়। এ সময় সব ধরনের ভাইরাস বাতাসে বেশি সময় ধরে ভাসতে পারে। তাই ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যায়।
দ্বিতীয়ত. শীতের সময় মানুষ আবদ্ধ জায়গায় বেশি থাকে। এটাও করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কার একটি কারণ।
তৃতীয়ত. আমাদের দেশে শীতকালে সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে যায়। যে কারণে মানুষের মেলামেশা বেড়ে যায়।