সরকারি অনুমোদন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফরিদপুরে গড়ে উঠছে একের পর এক ইটভাটা। এতে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ।
জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় চলছে অবৈধ ইটভাটার ইট পোড়ানোর কার্যক্রম। এসব দেখেও না দেখার অভিযোগ প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
জেলার সদরপুরের পেয়াজখালিতে অনুমোদন ছাড়াই ইটভাটা স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসী এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছে।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১১৯টি ইট ভাটা আছে। এর মধ্যে অবৈধ ইট ভাটা রয়েছে ২৫টি, যার মধ্যে লাইসেন্স নেই ১৪টি ইট ভাটার; আর পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই ১১টির।
পরিবেশ অধিদফতর ছাড়পত্র না থাকা ইট ভাটাগুলোর মধ্যে রয়েছে- জেলা সদরের মেসার্স এ ফি আই ব্রিকস, মেসার্স মন্ডল ট্রেডার্স ব্রিকস, মেসার্স লুৎফুন্নেসা ব্রিকস, মধুখালী উপজেলার মেসার্স এ আর ব্রিকস, মেসার্স এম আর ব্রিকস, কে এম জেড আর ব্রিকস, বোয়ালমারী উপজেলার মেসার্স কে বি ব্রিকস ও আহসান কবির হেলাল ব্রিকস, চরভদ্রাসন উপজেলার মেসার্স ফরহাদ হোসেন ব্রিকস এবং ভাঙ্গা উপজেলার মেসার্স হাওলাদার ব্রিকস।
এর মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইটভাটার কার্যক্রম চালানোয় সদরপুর উপজেলার মেসার্স ফকির ব্রিকস বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, তাদের ফসলি জমি পাঁচ বছরের জন্য লিজ নিয়ে সেখানে ইটভাটা করা হচ্ছে। ইটভাটার মূল লক্ষ্য অবৈধভাবে নদীর বালি ও মাটি উত্তোলন।
এতে সরকার শুধু রাজস্বই হারাচ্ছে না, ইট পোড়ানো ও বালির ট্রাক চলাচলের জন্য জনসবতিও হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ জানিয়েছে। সম্প্রতি ইটভাটা স্থাপনের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে মেসার্স ফকির ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী এখলাস আলী ফকির বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য আমরা আবেদন করেছি। ইতিমধ্যে কয়েকটি কাগজ আমরা পেয়েছি।
ফরিদপুর পরিবেশ অধিদফতরের উপ পরিচালক এ এইচ এম রাসেদ জানান, এলাকাবাসীর আপত্তির মুখে অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সদরপুরের মেসার্স ফকির ব্রিকসের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও যেসব ইটভাটা পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া ইট পোড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।
ফরিদপুর জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রউফ মিয়া বলেন, আয়কর ও ভ্যাট দিয়ে সরকারের আনুষঙ্গিক বিধিবিধান মেনে আমাদের বৈধ উপায়ে ইট ভাটার কার্যক্রম চালাতে হয়। এতে প্রতিটি ইট ভাটাকে বছরে বিপুল পরিমাণ খরচ হয়। যারা এসব নিয়ম না মেনে অবৈধভাবে ভাটা চালাচ্ছে তাদের এই টাকা খরচ হয় না। এতে আমরা যারা বৈধ ভাটার মালিক তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এজন্য অবৈধ ও অনুমোদনহীন ইট ভাটা বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দিপক রায় বলেন, যেসব ইট ভাটা মালিকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সঠিক পেয়েছি তাদেরকেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আর যাদের কাগজপত্র যথাযথ নেই তাদেরকে ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নোটিশ দেয়া হবে। এরপর নির্দেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।