বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্তির পথে এশিয়ান হাতি?

  •    
  • ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ১২:৩১

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর দেশে ১২টি হাতি হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে আটটি মারা হয়েছে বিদ্যুস্পৃষ্টে। বাকিগুলো গুলি করে মারা হয়েছে।

যেভাবে হাতি হত্যা চলছে তাতে দেশ থেকে এশিয়ান হাতির প্রজাতি শিগগিরই বিলুপ্তি হয়ে যেতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বন্যপ্রাণী গবেষকরা।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড় হাতিয়া ইউনিয়নে রোববার গভীর রাতে একটি এশিয়ান হাতি হত্যা করা হয়। গুলির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হাতিটি হত্যা করা হয় বলে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে।

একই কায়দায় গত ১৫ নভেম্বর কক্সবাজারের রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের খরলিয়া ছড়ার শাইরার ঘোনা এলাকায় আরও একটি বন্য হাতি হত্যা করা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর দেশে ১২টি হাতি হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে আটটি মারা হয়েছে বিদ্যুস্পৃষ্টে। বাকিগুলো গুলি করে মারা হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, যে হারে হাতি মারা যাচ্ছে। হাতির প্রজনন আর মৃত্যু হিসাব করলে বলা যায়, বাংলাদেশ থেকে শিগগির এশিয়ান হাতির বিলুপ্তি ঘটবে।

হাতি গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক ড. রায়হান সরকার বলেন, হাতির প্রজনন হার কিন্তু খুবই কম। একটি হাতি চার বছরে একটি শাবকের জন্ম দেয়। দেশে হাতির সংখ্যা ও মারা যাওয়ার হার হিসাব করলে বলা যায়, বাংলাদেশ থেকে এশিয়ান হাতি বিলুপ্ত হতে বেশি দিন লাগবে না।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় (চট্টগ্রাম) বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ নিউজবাংলাকে বলেন, লোহাগাড়ায় বড়হাতিয়ায় এলাকায় যেই স্থানে হাতিটি মারা গেছে সেখানে আমি পরিদর্শন করেছি।

‘গিয়ে দেখি বনের ভেতর গুচ্ছগ্রাম। ওখানে মানুষের বসতি। হাতিটি মারা হয়েছে গুলি করে আর বৈদ্যুতিক শক দিয়ে। বনের ভিতর মানুষের বিচরণ। বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বলতে গেলে প্রাণী হত্যার সব আয়োজন সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রয়েছে। তাহলে প্রাণী হত্যা তো চলবে। তাই স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। বনকে মানুষের হাত থেকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, সংরক্ষিত বনে বসতি গড়ে উঠেছে। সংরক্ষিত বন কাঠের জন্য কেটে ফেলছে। উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হাতির চলাচল পথ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। করিডোর নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য বাসস্থান সংকটে পড়েছে হাতি। তাই লোকালয়ে চলে আসছে প্রাণীটি। এতে মানুষ হাতির দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে।

আইইউসিএনের বিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় রয়েছে এশীয়ান হাতি।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ২০১৬ সালের হিসাবে, চট্টগ্রাম বিভাগে এশিয়ান হাতি রয়েছে ২৬৮টি।

আইইউসিএনের হিসাবে, বাংলাদেশে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৬৫টি হাতির বসবাস করে। এরপরে কক্সবাজার দক্ষিণে ৬৩টি, উত্তরে ৫৪টি, লামা বন বিভাগের ৩০টি, বান্দরবানে ১১টি, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণে ২৮টি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তরে ১৩টি বুনো হাতি বসবাস করে।

হাতির আক্রমণে মরছে মানুষ

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৮৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন অন্তত ৫১ জন।

বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ বলেন, মানুষের আক্রমণে শুধু হাতি মরছে তা নয়, হাতির আক্রমণে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

মানুষ হাতির দ্বন্দ্ব কেন?

আইইউসিএনের বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমীন নিউজবাংলাকে বলেন, ২০১৯ সালে আইইউসিএনের করা গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে হাতি চলাচলের পথ ও বিচরণের বনভূমিগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে খাদ্য সংকটে পড়েছে হাতি। করিডর বাঁধাগ্রস্থ হওয়া এবং খাবার সংকটের কারণে নিয়মিতভাবে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বিপন্ন এশিয়ান হাতি। যার ফলে হাতি মানুষের বসতি এলাকায় ঢুকে পড়ছে। এতে করে মানুষ হাতির সংঘাত বেড়েই চলেছে।

হাতি গবেষক ড. রায়হান সরকার বলেন, যুগ যুগ ধরে হাতি একই পথে ধরে চলে। কিন্তু দেশে হাতি চলাচলের পথে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠছে। রেললাইন, রাস্তাঘাট নির্মাণ হচ্ছে। টেকনাফে হাতির করিডোর ব্লক করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প হয়েছে। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি নতুন করিডোরের সন্ধানে হাতিগুলো এখন ছোটাছুটি করছে। এসব কারণে এখন মানুষ-হাতির সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে।

তিনি বলেন, পর্যাপ্ত খাবার, বিচরণের স্থান ও চলাচল পথ পেলে কখনও হাতি লোকালয়ে আসবে না। হাতি খুবই শান্ত একটি প্রাণী। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পছন্দ করে। তাই হাতিকে রক্ষা করতে হলে বিচরণের স্থান সংরক্ষণ, চলাচলের পথ ও পর্যাপ্ত খাবারের যোগান দিতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর