লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে সে দিন আবু ইউনুস মো. শহীদুন্নবী জুয়েলকে বাঁচাতে হাতজোড় করে মাফ চেয়েছিলেন তার বন্ধু সুলতান রুবায়েত সুমন।
বুধবার বিকেলে লালমনিরহাটের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে বুড়িমারীর ২৯ অক্টোবরের নৃশংসতার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সুমন এ জবানবন্দি দেন। বিচারক বেগম ফেরদৌসী বেগম এ জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
লালমনিরহাট ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মাহমুদুন্নবী এ দিন বিকেলে সুমনকে আদালতে হাজির করেন।
জবানবন্দিতে সুমন বলেন, ‘আমি আবু ইউনুছ মো. শহীদুন্নবী জুয়েলসহ যখন বুড়িমারীতে যাই তখন আসরের নামাজের সময়। পরে আসরের নামাজ আদায় করার জন্য জুয়েল মসজিদে যায়। আমি মোবাইল (ফোন) চার্জে লাগায়ে চার্জ দেয়া অবস্থায় যখন দেখি অনেক দেরি হচ্ছে। তখন আমি আগায় যাই। গিয়ে দেখি মসজিদের ভিতর তর্কাতর্কি করছে জুয়েল।’
সুমন বলেন, ‘তখন আমি সবার কাছে হাতজোড় করে মাফ চাই। বলি, “ভাই ও ভুল করেছে আমি আপনাদের কাছে মাফ চাচ্ছি।” তখন ৫/৭ জন লোক আমাদের মারতে মারতে বাইরে আনে এবং বলে “এদের ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাও।”’
‘তারপর পরিষদে নিয়ে আমাদের একটি রুমে আটকে রাখে। কিন্তু উত্তেজিত জনতা গ্রিল ভেঙে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করে। তারা আমার দিকে আসলে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্ত আমাকে নিয়ে তৃতীয় তলায় যান। পরে পেছন দিক থেকে আমাকে নামিয়ে নেন। পরে চেতনা ফিরলে দেখি আমি পাটগ্রাম হাসপাতালে।
‘সেখানেও নিরাপত্তা না থাকায় আমাকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমি শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ। আমার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার। চিকিৎসক আমাকে বেড রেস্টে (বিশ্রামে) থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।’ বলেন সুমন।
আবু ইউনুস মো. শহীদুন্নবী জুয়েল। ফাইল ছবি
আদালত প্রাঙ্গণে সুমনের স্ত্রী নাছিমা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন ফজরের নামাজের পর আমি একটি ফোন রিসিভ করি। তখন সময় আনুমানিক সাড়ে পাঁচটা হবে। তখন ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে বলে “আমি জুয়েল, সুমনকে রেডি হতে বলেন, আমি আসতেছি।”
‘পরে সকাল ৮টার দিকে জুয়েল আমাদের বাড়িতে এসে আমার স্বামী সুমনকে নিয়ে যায়। তবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জিজ্ঞাসা করলে (তিনি) জুয়েল বলেন, “একখানে যাচ্ছি। কিছু হবে না, আপনি চিন্তা করবেন না। তাড়াতাড়ি ফিরে আসব আমরা।" পরে সন্ধ্যার সময় আমি ঘটনা জানতে পারি।’ বলেন নাছিমা বেগম।
গত ২৯ অক্টোবর বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন শহীদুন্নবী জুয়েল। তিনি ও তার বন্ধুর বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে সেখানে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ টেনে নিয়ে আগুন দেয়া হয়।