বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বৃদ্ধের সঙ্গে বিয়ে: কী হয়েছিল দেওয়ানগঞ্জে?

  •    
  • ২৫ নভেম্বর, ২০২০ ১৮:১৪

যে সংবাদের ভিত্তিতে হাই কোর্টের আদেশ এসেছে,তাতে বলা হয়, বৃদ্ধের বয়স ৮৫; মেয়েটির ১১। তার সঙ্গে ওই বৃদ্ধের নাতির প্রেম ছিল। এক পর্যায়ে মেয়েটি গর্ভবতী হয়। পরে মেয়েটির গর্ভপাত করানো হয়। আর সালিশ করে বৃদ্ধের সঙ্গে মেয়েটিকে বিয়ে দেয়া হয়। তবে ভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে সালিশে ৮৫ বছরের বৃদ্ধ মহির উদ্দিনের সঙ্গে কিশোরীকে জোর করে বিয়ে দেয়ার সংবাদে তোলপাড়। গণমাধ্যমে আসা খবর নজরে আনার পর তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। তবে এলাকায় গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে ভিন্ন তথ্য।

সালিশকারী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের দাবি, মেয়েটি শিশু নয়, তার বয়স ১৮। আর তাকে ওই বৃদ্ধ ধর্ষণ করেছেন বলে সালিশে স্বীকার করেছেন। তখন তাদেরকে বিয়ে দেয়া হয়।

ঘটনাটি ঘটেছে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের বয়ড়াপাড়া গ্রামে।

উচ্চ আদালতের আদেশের পর জেলা সদর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে দুর্গম গ্রামটিতে গিয়ে জানা গেছে, বৃদ্ধ ও মেয়েটির বাড়ি পাশাপাশি। যদিও দুটি বাড়িই এখন তালাবদ্ধ।

যে সংবাদের ভিত্তিতে হাই কোর্টের আদেশ এসেছে, তাতে বলা হয়, বৃদ্ধের বয়স ৮৫; মেয়েটির ১১। তার সঙ্গে ওই বৃদ্ধের নাতির প্রেম ছিল। এক পর্যায়ে মেয়েটি গর্ভবতী হয়। পরে মেয়েটির গর্ভপাত করানো হয়। আর সালিশ করে বৃদ্ধের সঙ্গে মেয়েটিকে বিয়ে দেয়া হয়। 

মঙ্গলবার উচ্চ আদালত ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেয়ার পর জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক একটি কমিটি গঠন করেছেন। বলেছেন, প্রতিবেদন পেলে আমরা হাই কোর্টকে জানাব।

আদালতের নির্দেশের পর গ্রাম্য সালিশে উপস্থিত স্থানীয় ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন নাদুকে এলাকায় পাওয়া গেলেও অন্যান্য মাতুব্বরদের পাওয়া যায়নি। তারা আত্মগোপনে আছেন।

বিষয়টি নিয়ে কথাও বলতে রাজি নন স্থানীয়দের একটি বড় অংশ। তবে যারা কথা বলেছেন, তাদের বর্ণনা আর সংবাদে আসা তথ্যে ভিন্নতা পাওয়া গেছে।

ইউপি সদস্য জয়নাল দাবি করেন, এই ঘটনায় সালিশ হয়েছে দুটি। আর বিয়ের সিদ্ধান্ত সালিশে নেয়া হয়নি। বিয়ের পর সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় সালিশে।

ইউপি সদস্যের দাবি, সালিশে ওই বৃদ্ধ মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন। মেয়েটির বয়স জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী ১৮ বছর ৯ মাস। আর মেয়েটির সম্মতিতেই শর্তসাপেক্ষে এই বিয়ে পড়ানো হয়েছে।

বিয়ের আগে শর্ত হিসেবে মেয়েটিকে ২০ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়েছে। আর এরপর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় দুই পরিবার।

ইউপি সদস্য জয়নাল বলেন, বিয়ে পড়ানোর পর দ্বিতীয় দফা সালিশ হয়। তার তখন তাদের বিয়ের সামাজিক মর্যাদা দেয়া হয়।

ওই বৃদ্ধ আর মেয়েটি কোথায়। এমন প্রশ্নে ইউপি সদস্য বলেন, কিছু দিন যাবত দুই পরিবারের কাউকেই গ্রামে দেখা যাচ্ছে না।

শিশুটি স্থানীয় কওমি মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।

পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া একটি মেয়ের বয়স কীভাবে ১৮ হয়- এমন প্রশ্নে ওই ইউপি সদস্য দাবি করেন, মেয়েটির পড়াশোনায় দেরি হয়েছে।

তিনি বলেন, মেয়েটি স্থানীয় একটি মাধ্যমিক স্কুলে ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। এর পর স্থানীয় একটি আলিয়া মাদ্রাসায় এক-দেড় বছর পড়াশোনা করে। সেখানে পড়াশোনা শেষে ভর্তি হয় কওমি মাদ্রাসায়।

ইউপি সদস্য জানান, ওই বৃদ্ধের নাতিকে দোররা মারার খবরও সত্য না। মারা হয়েছে তাকেই।

স্থানীয়রা জানান, ওই বৃদ্ধ এর আগেও তিনটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী বার্ধক্যজনিত কারণে আর তৃতীয় স্ত্রী স্ট্রোক করে মারা যান।

প্রথম ঘরের সাতটি সন্তান। চারটি ছেলে, তিনটি মেয়ে। দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান নেই। তৃতীয় স্ত্রীর সন্তান নেই।

২৭ বছর আগে তৃতীয় বিয়ে করেছেন। আর নানা সময় তার বিরুদ্ধে নারীঘটিত নানা অভিযোগ ছিল।

বয়ড়া গ্রামের বাসিন্দা ছামিউল হক বলেন, ‘বুড়া আর মেয়ে যেহেতু মিউচুয়াল হয়েছে, এখানে আমরা আর কী বলমু? আমাদের বলার কী আছে? ভিকটিম আর অপরাধী যদি উভয়ে স্বীকৃতি দেয়, অপরাধী যদি কয় যে, আমি অপরাধী, ওই জায়গায় আমি আফনে কী করমু? করার কিছু আছে?’

গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন নিয়ে নাখোশ ছামিউল। বলেন, ‘এডা নিয়ে মিডিয়া, সাংবাদিক মেলা কিছু করতাছে। আঙ্গর ইজ্জত নিয়ে খেলতাছে। এইডে নিয়ে বাড়াবাড়ি করার প্রয়োজন আছে? দেড় মাসের ঘটনা আজকে কে?’

অন্য একজন বলেন, ‘বৃদ্ধের একটু সমস্যা আছে। এইটা নিয়ে চারটে বিয়ে করলে। পারলে আরও বিয়ে করত। সহজ জিনিসটা সাংবাদিক সাহেবেরা বড় কইরে ফালাইছে।’

‘সালিশির সময় ৫০০ লোক আছিলে। বুড়া দুষ স্বীকার করছে। তার কয়দিন পরে ওরা ওরাই বিয়ে পড়াইছে। এরপর সমাজ মিলানির জন্য আবার সালিশি হয়। তখন দোররা মারে। সমাজের সবাই তহন আছিল। এরপরেই নিউজ হয়ছে। পুলিশ আইছে। গতকাল (সোমবার) রাত থাইকে কাউকে আর দেখা যাইতাছে না। সবাই পলাইছে।’

এ বিভাগের আরো খবর