দলগত ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে তিন জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে শরীয়তপুরের একটি আদালত।
বুধবার সকালে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের বিচারক আবদুস সালাম খান এই আদেশ দেন। আসামিদেরকে ৫০ হাজার টাকা জারিমানাও করা হয়।
মামলায় আসামি ছিলেন মোট ১২ জন। তবে নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় নয় জনকে বেকসুর খালাস দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে এই রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আর এই ধরনের সাজা কার্যকর হলে ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক অপরাধ কমবে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন জন হলেন মোরশেদ উকিল, আবদুল হক মুতাইত ও জাকির হোসেন মুতাইত। এরা কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
তিন জনের বাড়ি ডামুড্যা উপজেলার চরভয়রা গ্রামে। রায় ঘোষণার সময় সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বিচারকের আদেশের পর ফাঁসির দণ্ড পাওয়া তিন জনকে কারাগারের কনডেম সেলে নেয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, বাকি ৯ আসামির রিলিজ অর্ডারও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা না থাকলে তারা মুক্তি পাবেন।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করে আইন সংশোধনের পর এই ধরনের মামলায় প্রথমবারের মতো প্রাণদণ্ডের আদেশ এসেছে। তবে এটি সংশোধিত আইনের সাজা নয়।
আগের আইনেই দলগত ধর্ষণ আর ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। আর এই ঘটনার বিচারে সংশোধিত আইন প্রয়োগ করাও যেত না।
মামলার নথি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি ডামুড্যা উপজেলার চর ভয়রা গ্রামে আনুমানিক রাত নয়টায় দিকে হাওয়া বেগমকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন আসামিরা।
মামলায় বলা হয়, মোবাইল ফোনে চার্জ দেয়ার কথা বলে বাড়ির বাইরে যান হাওয়া বেগম। আর প্রধান আসামি মোর্শেদ উকিল তাকে এক প্রতিবেশীর পরিত্যক্ত দোচালা টিনের ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। ঘটনাটি অন্য আসামিরা দেখে ফেলেন। তারাও ওই নারীকে ধর্ষণ করেন।
গৃহবধূর স্বামীর করা মামলায় বলা হয়, বিষয়টি গোপন রাখতে মোরশেদ উকিল ও আবদুল হক মুতাইত হাওয়া বেগমকে হত্যা করেন। আর তাদেরকে সহযোগিতা করেন জাকির হোসেন।
ওই গৃহবধূর স্বামী একজন রং মিস্ত্রি। কাজের সুবাদে প্রায়ই ঢাকায় যান। আর ঘটনার রাতেও তিনি বাড়িতে ছিলেন না।
স্ত্রীকে হত্যার খবর পেয়ে তিনি বাড়ি আসেন। আর পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও চার/পাঁচ জনকে আসামি করে ডামুড্যা থানায় মামলা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফিরোজ আহমেদ রায়ে সন্তুষ্টি জানিয়ে বলেন, ‘ধর্ষণ একটি ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রায়ের ফলে ধর্ষণ কমে আসবে বলে আমরা আশা করছি।’
আসামিদের জবানবন্দি ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই আদালত রায় দিয়েছে বলেও জানান এই আইনজীবী।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলামের দাবি, তারা ন্যায়বিচার পাননি। তিনি বলেন, ‘এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আশা করি তারা সেখানে খালাস হবেন।’