বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘টিভি-ফ্রিজ সবই ছিল, অহন খাওনের টাকাও নাই’

  •    
  • ২৫ নভেম্বর, ২০২০ ০১:৪৬

কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন মিজান মিয়া। তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাবর রোডে বিহারী ক্যাম্পের পাশে জহুরি মহল্লার বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনায় ঘর হারানোদের একজন।

‘গেঞ্জি আর লুঙ্গিটাই অহন আমার একমাত্র সম্বল। পাশের বাইত্তে এক পুরান স্যান্ডেল নিয়া পায়ে দিছি৷ জীবন আবার নতুন কইরা শুরু করতে অইব। যা কামাইছিলাম, গড়ছিলাম- সব শেষ।’

কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন মিজান মিয়া। তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাবর রোডে বিহারি ক্যাম্পের পাশে জহুরি মহল্লার বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনায় ঘর হারানোদের একজন।

নিউজবাংলাকে তিনি আরও বলেন, ‘টিভি-ফ্রিজ সবই ছিল। অহন খাওনের টাকাও নাই।’

মঙ্গলবার বিকালের এই আগুনে পুড়ে গেছে গৃহকর্মী রাহেলা খাতুনের ঘরও। তিনি জানান, স্বামী আরেক বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছেন। দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে এখন তার সংসার।

নিউজবাংলাকে রাহেলা বলেন, ‘জামাই গেছে কবেই৷ পইলা ভাবছিলাম তার বুঝি কিছু অইছে। থানায় গিয়া জানাইছি পর্যন্ত৷ পরে জানছি হেতে বিয়া কইরা বউ লইয়া যাত্রাবাড়ী থাহে। দুই মাইয়া আর পোলা থুইয়া গেছে আমার ঘাড়ে।’

তিনি বলেন, ‘ফজরের নামাজ পইড়া বাইর অইতাম কামে, রাইত ১২টা পর্যন্ত মাইনষের বাইত কাম করতাম। দুই মাইয়ারে পড়ালেখা করাইছি। বই খাতা, সার্টিফিকেট সব পুইড়া শেষ। মাইয়ার বিয়ার লাইগা ৬০ হাজার টেকা জমাইছি। হেইডাও শেষ।’

মোহাম্মাদপুরে বস্তিতে আগুনে পুড়ে যাওয়া বসতঘর। ছবি: নিউজবাংলা

 

ট্রাকের হেল্পার মঞ্জু মিয়া বিয়ে করবেন৷ সে জন্য নতুন খাট, আলমারি, শোকেস ও টিভি কিনেছিলেন। আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

মঞ্জু মিয়া বলেন, ‘বিয়া করবার চাইছিলাম। পছন্দের বিয়া। মাইয়ার বাপে রাজি আছিল না। আমি হেল্পারের কাম করি তাই। বুঝাইয়া শুনাইয়া কইছি, মাইয়ার সুখের অভাব থাকব না। গত মাসেই সেগুন কাঠ দিয়া খাট বানাইছি। টিভিও কিনছিলাম। এহন কিচ্ছু নাই।

‘আমার বিয়াডা না আবার ভাইংগা যাই। কাম কইরা আবার ত ঘর পামু, খাটও পামু। মাইয়া কই পামু।’

মিজান, রাহেলা, মঞ্জুর মতো অনেকেই মঙ্গলবারের আগুনে ঘর হারিয়েছেন। তারপর পোড়া স্তুপের উপরেই মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন তারা। কেউ বিলাপ করে কাঁদছিলেন; কেউ নীরবে তাকিয়ে ছিলেন।

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিপাকে রয়েছেন অনেকেই। কিশোরী মেয়েদের নিয়ে বেশি চিন্তিত বাবা-মায়েরা।

আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, ‘আমার তিন মাইয়া। সবডি বড় অইছে। আমি রাস্তায় থাকুম। মাইয়াগুলারে কই রাখুম। মাইয়া মানুষ। বুঝেনই। কত কী থাহে।’

জহুরি মহল্লার পুড়ে যাওয়া বস্তির দুই পাশেই রয়েছে বহুতল ভবন। বস্তিতে আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বস্তির এক বাসিন্দা বলেন, ‘আগুন কেউ লাগাইছে। কারা লাগাইছে- এইডা কইয়া জান হারাইতে পারুম না। ঘর হারাইছি। জান হারাইতে চাই না।’

বস্তিতে পুড়ে যাওয়া ঘরগুলোর একটিতে থাকতেন জব্বার মিয়া। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এইহানে ৪০টির বেশি ফ্রেম আছিল। এক একটা ফ্রেমে ৪টা-৫টা ঘর। সব পুইড়া শেষ।’

নাসিমা বেগম বলেন, ‘ঘরের খাট-মাট তো ধরতেই পারি নাই। কোনোরকম ট্রাংক নিয়া বাইর হইছি। তয় ট্রাংকে যে টাকা আছে তা দিয়া দুই দিনও খাইতে পারুম না।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাচ্চা ঘুমাইতাছিল। জিনিসের দরকার কি৷ আগে জান বাঁচানো ফরজ৷ বাচ্চারে কোলে লইয়া খালি দৌড় দিছি।’

ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাদী সুলতানা জানান, বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর শুনে তাদের ১০টি ইউনিট সেখানে যায়৷ ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে৷ আগুনে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি৷

ফরিদপুরে নদী ভাঙনের কারণে ত্রিশ বছর আগে ঢাকায় এসে এই এলাকায় বসবাস শুরু করেন আল আমিন মিয়া৷

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এক কালে নদী নিয়া গেছে সব৷ এহন আগুন নিয়া গেছে সব। গরিবের কোনো আল্লাহ নাই।

‘জমি-জমা ছিল। নিজেগো বাড়ি ছিল। পাঁচ-ছয়টা গরু, দুইটা ছাগল আছিল। সেগুলো হারাইয়া ঢাকাত আইলাম। কামাইয়া ঘর সাজাইলাম। এহন আগুনে সব শেষ।’

এ বিভাগের আরো খবর