রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তির সামনের বাজারে চাল-মসলা ভাঙার মিল ছিল বরিশালের দুলাল চন্দ্র দাসের। সোমবার রাত ১১টার দিকে দোকান বন্ধ করে যাওয়ার সময় একটি কৌটায় দুই লাখ টাকা রেখে গিয়েছিলেন তিনি।
মধ্যরাতে আগুন লাগার খবরে ছুটে যান দুলাল। গিয়ে দেখেন দোকানের সঙ্গে পুড়ে গেছে সব টাকা। এরপর থেকেই পাগলের দশা তার।
মঙ্গলবার সকালেও পুড়ে যাওয়া নোটগুলো সামনে নিয়ে বসে বিড়বিড় করছিলেন দুলাল। কোনো কথাই ঠিকমতো বলতে পারছিলেন না। নোটগুলো দেখিয়ে শুধু বলছিলেন, ‘আমার সব শ্যাষ, আমার সব শ্যাষ।’
মহাখালী সাততলা বস্তির আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে দুলালের মতো অনেকের শেষ সম্বল। ফায়ার সার্ভিসের ১২ ইউনিট যতক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে, ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যায় শতাধিক ব্যক্তির ঘর ও দোকান।
সোমবার মধ্যরাতে নিজেদের ঘরে আগুন লাগার আগেই বেরিয়ে এসেছিলেন বস্তির বাসিন্দা মনির, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান। কিন্তু ঘর থেকে একটি সুতোও বের করতে পারেননি। আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া ঘরের ধ্বংসাবশেষ সামনে নিয়েই রাত কাটান এ দম্পতি।
মনিরের স্ত্রী শিল্পী বেগম জানান, তারা যে মালিকের ঘরে ভাড়া থাকতেন, তার দোকানেই আগুন লাগে। দোকানের পেছনেই তাদের ঘর। আগুন, আগুন চিৎকার শুনে ঘুম থেকে ওঠেন।
আগুন লাগার সময় মনির ঘরের বাইরে ছিলেন। আগুন দেখে তিনিও দৌড়ে যান। ঘুমিয়ে থাকা দুই মেয়েকে কাঁধে ও কোলে নিয়ে ঘর থেকে বের হন।
শিল্পী বলেন, ‘শুধু জীবন নিয়ে বের হইছি।’
মঙ্গলবার সাততলা বস্তির বটতলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বস্তির সামনের অংশে দোকান; পেছনে থাকার ঘর। এক তলা পর্যন্ত পাকা, উপরে টিনের বেড়া ও চালা। এই বাজারের মাঝামাঝি জায়গায় সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে আগুন লাগে।
স্থানীয়রা জানান, বাজারে উজ্জ্বলের মনোহারী দোকান থেকে আগুনের শুরু।
ওই দোকানের পেছনেই তিনটি ঘর। একটিতে থাকতেন উজ্জ্বল। বাকি দুটির একটিতে পরিবার নিয়ে থাকতেন মনির।
মনির জানান, উজ্জ্বল স্টোরে আগুন লাগার পর ডান পাশে দোতলা ঘরে আগুন লাগে। এরপর বাম পাশে ও পেছনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি জানান, আগুন প্রথমে শুধু সামনের দোকানে (উজ্জল স্টোর) ছিল। এরপর অন্যগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।
দোকানের মালিক উজ্জ্বল সোমবার রাজধানীতে ছিলেন না। আগুনের খবর পেয়ে ঢাকার দোহার থেকে মঙ্গলবার সকালে বস্তিতে আসেন।
তিনি বলেন, ‘সবাই বলছে, আমার দোকান থেকে নাকি আগুন লাগছে। আমার তো ঘর-দোকান সব শ্যাষ।’
সাততলা বস্তির আগুনে দেড় শতাধিক ঘর ও দোকান পুড়ে গেছে বলে বাসিন্দারা দাবি করলেও সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
ক্ষতির হিসাব ও আগুন লাগার কারণ জানতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।