সিলেটের নাম শুনলেই অনেকের চেহারায় ভেসে ওঠে সুরমা নদীর পাশে ‘আলী আমজদের ঘড়ি’। ১৪৬ বছরের পুরনো এ ঘড়িটি বিকল হয়ে পড়ে আছে এক সপ্তাহ ধরে। তবে কবে সে ঘড়িটি ঠিক করা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
এর আগে প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৯ সালে ঘড়িটি চালু করা হয়েছিল। তারও আগে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বড় ধরনের সংস্কার শেষে ২০১৬ সালে ঘড়িটি চালু করেছিল সিসিক।
গত রোববার দুপুরে নগরীর চাঁদনীঘাট এলাকার আলী আমজদের ঘড়িঘরের পাশে গিয়ে দেখা যায়, ৮টা ১৯ মিনিটে আটকে আছে ঘড়ির কাঁটা। এরপর সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আবার গিয়ে দেখা যায়, একই জায়গায় আটকে রয়েছে কাঁটা। মঙ্গলবার সকালেও অবস্থা অপরিবর্তিত।
এই ঘড়ি প্রতি ঘণ্টায় শব্দ করে নগরবাসীকে সময় জানান দিত। অচল হয়ে পড়ার পর থেকে ঘণ্টাও বাজছে না।
ঘড়িটির সামনেই এবড়ো-খেবড়োভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন গাড়ি। ফলে এই এলাকার সৌন্দর্যহানিও হচ্ছে।
চাঁদনীঘাট এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এক সপ্তাহ ধরে ঘড়িটি বিকল হয়ে আছে। কিন্তু ঠিক করার কোনো উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি।
তবে ঠিক কখন ঘড়িটি বিকল হয়েছে, তা জানাতে পারেননি তারা।
সিসিকের কাছে থাকা নথি থেকে জানা যায়, ১৮৭৪ সালে তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থব্রুক সিলেট সফরে এসেছিলেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান নগরের প্রবেশমুখ চাঁদনীঘাট এলাকায় ঘড়িটি নির্মাণ করেন।
তিনি ঘড়ির নামকরণ করেন নিজের ছেলে আলী আমজদ খানের নামে। সেই থেকে এটি ‘আলী আমজদের ঘড়ি’ নামে পরিচিত।
সেই সময়ের ছোট্ট ও কোলাহালহীন শহরের দূরদুরান্ত থেকেও এই ঘড়ির ঘণ্টার শব্দ শোনা যেত। সময়ের পরিক্রমায় এই ঘড়ি হয়ে উঠেছে ঐতিহ্যের অংশ। পর্যটকরা দেখতে আসেন বিশাল এ ঘড়ি।
সিসিকের তথ্য অনুযায়ী, আলী আমজদের ঘড়ির দৈর্ঘ্য ৯ ফুট ৮ ইঞ্চি; প্রস্থ ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি। নিচ থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ১৩ ফুট। অন্যদিকে ছাদ থেকে ঘড়ির অংশের উচ্চতা ৭ ফুট। ঘড়ির উপরের অংশের উচ্চতা ৬ ফুট। মোট উচ্চতা ২৬ ফুট।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের গোলার আঘাতে এই ঘড়ি বিধ্বস্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর সিলেট পৌরসভা ঘড়িটি মেরামত করে সচল করে। তবে এরপর থেকে মাঝে মাঝেই অচল হয়ে পড়ে এটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে ঘড়িঘরের ফাঁকফোকর দিয়ে পাখি প্রবেশ করে ঘড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট করে ফেলত। এ কারণেই ঠিক করার কিছুদিন পরই ঘড়িটি বিকল হয়ে যেত। তবে ২০১৬ সালে পাখি প্রবেশের পথ বন্ধ করে নতুনভাবে সংস্কার করা হয়। এরপরও নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখা যাচ্ছে না ঘড়িটি।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘ঘড়িটির আবার বিকল হয়ে পড়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেব।’