ভাস্কর্য ইস্যুতে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে বলে সতর্ক করেছেন সাংস্কৃতির কর্মীরা।
সব ধরনের রাজনৈতিক কৌশল পরিহার করে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অপতৎপরতা প্রতিরোধ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব দল ও সংগঠনকে এক হওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে ধর্মভিত্তিক একটি দলের অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় এই সতর্কতা জানানো হয়েছে।
যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছে, তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছে সোমবার বিবৃতি দিয়েছে ১১টি সাংস্কৃতিক ফেডারেশন।
সংগঠনগুলো হলো: সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ, বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার।
সংস্কৃতিকর্মীরা বলেন, মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে প্রচুর ভাস্কর্য আছে। এটা জেনেও সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে এখানে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চলছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভাস্কর্য একটি দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক। সৌদি আরব, ইরান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর সকল মুসলিম দেশেই অসংখ্য ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে একটি বিশেষ মহল উদ্দেশ্যপূ্র্ণভাবে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উত্তেজিত করে দেশে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে।’
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে এই বেদীতে নির্মিত হবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য: ছবি নিউজবাংলা
এই ধরনের অপচেষ্টাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং গণতান্ত্রিক ভিত্তির উপর চরম আঘাত বলেও উল্লেখ করেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে সম্প্রতি সমাবেশ করেছে বরিশালে চরমোনাইয়ের পীরের রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন। দলের নেতারা ভাস্কর্যকে ইসলামবিরোধী দাবি করে বলেছেন, জনগণ একদিন এই ভাস্কর্যকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেবে।
হেফাজতে ইসলামীর নেতা মামুনুল হকও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।
ক্ষমতাসীন দল সরাসরি প্রতিক্রিয়া না জানালেও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, ধোলাইপাড়ে ভাস্কর্য হবেই। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আরও একটি নির্মাণ করবেন তারা।
ধর্মভিত্তিক দলের নেতাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া না জানানোর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রাস্তাঘাটে যার তার যা তা বক্তব্যে কোনো জবাব দেন না তারা।