বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘এইডা ভাইঙা দেইক, না হয় মেরামত কইরা চালু করুক’

  •    
  • ২৩ নভেম্বর, ২০২০ ০৮:৫৭

তাজরীন ফ্যাশনে আগুনের আট বছরেও কারখানা চালু হয়নি। সংস্কার হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি। আশেপাশের লোকজন শঙ্কিত স্থাপনাটি নিয়ে। ধসে পড়লে কী হবে, তা নিয়ে চিন্তিত তারা।

‘ঝড় বা ভূমিকম্প আইলে আমরা ডরে থাকি। কোন সোম যে এইডা ভাইঙা পড়ে, হ্যার কোন গ্যারান্টি নাই। পোড়া বিল্ডিংটা এত বছর ধইরা এমনে খাড়ায় রইছে কারো মাথা ব্যথা নাই।’

আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় তাজরিন ফ্যাশনে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন দেখিয়ে বলছিলেন ভবন লাগোয়া বাসিন্দা সালাহ উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘গত বছর ঝড়ে বিল্ডিংয়ের জানালার ভাঙা কাঁচগুলা চুরমুরাই পড়ছে চালের উপর। তহন আমরা বাড়িঘর থুইয়া পলায় গেছিলাম। ভাগগিস কোনো এক্সিডেন্ট অয় নাই।’

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে বিভীষিকা নেমে এসেছিল বন্ধ থাকা কারখানায়। সেখানে কয়েকশ শ্রমিক কাজ করতেন, তাদের মধ্যে ১১৪ জনের পুড়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয় প্রশাসন। আহত হয় অনেকে। আগুন থেকে বাঁচতে চার তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে কেউ ভেঙেছেন মেরুদণ্ড, কেউ ভেঙেছেন হাত, কেউ ভেঙেছেন পা।

মামলা শেষ হয়নি আট বছরে। এই কারখানা চালু হয়নি; ভবনটি মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনার স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে।

সালাহ উদ্দিনের ভয়, এই ভবন ভেঙে পড়লে তিনি সবার আগে মরবেন। জানান, তাজরিন লাগোয়া তার ২৮টা টিনের ঘর ছিল। আগুনে তার ঘরগুলোও পুড়ে যায়।

সেই ঘরগুলো নতুন করে গড়েছেন। কিন্তু ভঙ্গুর ভবনটি ভয় দেখায় তাকে। বলেন, ‘এই বিল্ডিং যদি অহন ভাইঙা পড়ে তাইলে কী অবস্থাটা না হইব! সরকার এইডার বিষয়ে কুনো ব্যবস্থাই নিতাছে না। এলাকার স্বার্থে হয় এইডা ভাইঙা দেইক, না হয় মেরামত কইরা চালু করুক।’

তাজরিন ট্র্যাজেডির আট বছরে এসে ভবনটির সামনে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। পুরো ভবনজুড়ে যেন দগদগ করছে, সেই ২৪ নভেম্বরের ক্ষত। আগুনের প্রচণ্ড তাপে বেঁকে যাওয়া জানালার গ্রিলগুলো চোখে ভাসিয়ে তুলছে সেই দিনের ভয়াবহতা।

বরাবরই তাজরিন ফ্যাশন ট্র্যাজেডির বর্ষপূর্তিতে এসে কারখানার ফটকটি ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। দেখভাল করার জন্য মালিকপক্ষের একজন লোক সবসময় ভেতরে থাকেন। সাংবাদিক দেখলেই দ্রুত গেটটি আটকে দেন তিনি।

তবে একপাশে ভাঙা সীমানা প্রাচীর দিয়ে ভবনের ভেতরটা কিছুটা দেখা যায়। পিলারগুলোর বেশিরভাগের পলেস্তারা খসে পড়েছে। তবে কিছু পিলার মেরামতও করা হয়েছে।

সিঁড়ি ঘরে আগুনের লেলিহান শিখার সেদিনের ভয়াবহতা স্পষ্ট। কালচে দাগের দেয়ালগুলো যেন বলে দিচ্ছে সব। ছাদের বাইরের অংশেরও পলেস্তারা খসে পড়েছে।

তাজরিন ভবনের পাশের বাড়ির মালিক মীর আকবর বলেন, ‘এই ভবনডা ঝুঁকিপূর্ণ। ৮০ ফুট উঁচা এই বিল্ডিং যদি ধইসা পড়ে তাইলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হইব। বিল্ডিংয়ের সামনেই রাস্তা দিয়া মানুষ চলাচল করে।

‘ভাঙলে রাস্তার উপর আইসা পড়ব। বিল্ডিংয়ের চারদিকে কমপক্ষে আড়াইশ বাড়ি আছে। এহন এসব বাড়ির সবাই আমরা আতঙ্কে আছি।’

কারখানা বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন সামনের তিন তলা ভবনের মালিক শাহ জাহান। তিনি বলেন, ‘ফ্যাক্টরিটা বন্ধ হইয়া যাওয়ার পর ভাড়াইট্টে কইমা গ্যাছে। বাড়ির কাছাকাছি ফ্যাক্টরি আছিল; তাই ভাড়াট্টিয়া পাওয়া গেছে। এলাকায়ও লোকজন কইমা গ্যাছে। কারণ, নতুন কইরা তো ইন্ডাস্ট্রি হয় নাই।

‘ওই ফ্যাক্টরিতে আগে দুই-তিন হাজার লোক ছিল। ফ্যাক্টরির সামনে দিয়া অনেক দোকান আছিল। প্রতিদিন বিকালে কাপড়ের দোকান বসত। কাঁচাবাজার আছিল। অনেক মানুষ আইসা জামাকাপড় কিনত, বাজার করত। মাল নিয়া অনেক গাড়ি আসত। গাড়ির স্টাফরা দোকানে বইসা চা-বিস্কুট খাইত। কিন্তু ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগার পর হেই দোকানগুলা সব চইলা গ্যাছে।’

সাভার উপজেলা প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামাণিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এলাকাবাসীকে এ বিষয়ে একটা অভিযোগ দিতে হবে। তখন আমরা পদেক্ষপ নিতে পারব। উপজেলা প্রশাসন বললে ইউএনও মহোদয় আমাকে মার্ক করে দিলে আমি পরিদর্শনে টিম পাঠাব।’

এ বিভাগের আরো খবর