বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনায় চাকরি হারিয়ে মানসিক রোগ

  •    
  • ২৩ নভেম্বর, ২০২০ ০৮:৩৪

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা বলছে, করোনার কারণে দেশে চাকরি হারিয়েছে দেড় কোটি মানুষ। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন, তাদের বড় একটি অংশ এ ধরনের মানুষ।

পড়াশোনা শেষ করে এক বছর আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে ঢুকেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এক নারী। বিয়ে করেছেন। তবে তার সঙ্গী বেকার।

করোনাভাইরাস মহামারিতে দুজনের সংসার চালানোর একমাত্র অবলম্বনটিও হারান ওই নারী। সেই কষ্ট থেকে শুরু হয় মানসিক যাতনা।

দিন-রাত বাসায় থেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন ওই নারী। কোনোভাবেই তাকে চাঙ্গা করা যাচ্ছে না। পরে জীবনসঙ্গী গত বৃহস্পতিবার নিয়ে আসেন রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে।

আগারগাঁওয়ের হাসপাতালের প্রবেশমুখে ঢুকতেই দেখা গেল, দুই জনে ঝগড়া করছেন। স্বামীর উদ্দেশে ওই নারী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘এখন তো আমাকে আর ভালো লাগবে না। আমি তো টাকা ইনকাম করতে পারি না।

‘তুই আমাকে ছেড়ে দিবি ভালো কথা। তবে অন্য কোনো অপবাদ দিবি না। আমি মানসিক রোগী না।’

করোনাকাল মানুষের জীবন পাল্টে দিচ্ছে বহুভাবে। চাকরিহারা, ব্যবসাহারা মানুষরা এই সময়ে হতাশায় নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন। 

মানসিক সমস্যা নিয়ে যারা ঢাকার একমাত্র বিশেষায়িত এই হাসপাতালটিতে আসছেন, তাদের একটি বড় অংশই এ নারীর মতো।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) একটি জরিপ বলছে, করোনার কারণে শুরুর তিন মাসে বিশ্বে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ এশিয়ার।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা বলছে, করোনার কারণে দেশে চাকরি হারিয়েছে দেড় কোটি মানুষ।

করোনায় বাংলাদেশে মানসিক রোগী কী পরিমাণ বেড়েছে, তার পরিসংখ্যান না থাকলেও ভারতীয় সাইকিয়াট্রি সোসাইটির সমীক্ষা বলছে, সে দেশে মহামারিকালে এ ধরনের রোগী বেড়েছে ২০ শতাংশ।

এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের আয় কমে আসছে।

‘অনেকে নিজের ব্যবসা হারিয়ে হতাশায় ভুগছেন। এ কারণে বিষণ্নতা ও মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। তবে রোগী বাড়লেও চিকিৎসার বাইরে থাকছেন অনেকে।’

কী ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে এ চিকিৎসক বলেন, ‘হতাশা, উদ্বেগ, মেজাজ খিটখিটে রোগী বাড়ছে। এদের শুধু পরামর্শ দিয়ে কাজ হচ্ছে না, ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে; ওষুধ দিতে হচ্ছে।’

যুব সমাজের ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি জরিপ করে। এতে অংশ নেয়া ৮০ শতাংশ যুবক বলেছেন, করোনার কারণে তাদের আয় কমে গেছে। আর ৯৬ শতাংশ যুবক বলেছেন, বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তারা। এর মধ্যে ৫৯ ভাগ জানান, তাদের মানসিক চাপ প্রকট। গ্রামের তুলনায় শহরের যুবকরা বেশি চাপে আছেন।

জরিপে অংশ নেয়া ৮০ শতাংশ বলেছেন, করোনাকালে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি। এনজিওর সহায়তার ক্ষেত্রেও প্রায় একই চিত্র পাওয়া গেছে।

সিডিপির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, যুব কর্মসংস্থানের জন্য বাস্তবমুখী কার্যক্রম নিতে হবে। প্রণোদনা প্যাকেজে যুবাদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।

জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউটটির এক গবেষণা বলছে, মানসিক রোগ হলে কেবল আট শতাংশ চিকিৎসা নিতে আসেন। করোনাকালেও এই চিকিৎসা না নেয়ার প্রবণতা আরও উদ্বেগজনক, বলছেন চিকিৎসক হেলাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘পরিবারের এক সদস্যের এ সমস্যা দেখা দিলে অন্যরা চিকিৎসকের কাছে নিতে চায় না। এমনকি অন্যের কাছে প্রকাশ করতেও চায় না। তারা মনে করেন মানসিক সমস্যার কথা প্রকাশ হলে তারা সমাজের চোখে হেয় হয়ে যাবেন। কিন্তু এটা বিপজ্জনক।’

অবশ্য চাইলেও সবাই চিকিৎসকের কাছে যেতে পারবেন না। কারণ ১৬ কোটি মানুষের দেশে এ ধরনের চিকিৎসা দেয়ার জন্য আছেন মাত্র ২৭০ জন বিশেষজ্ঞ। ঢাকার বাইরে পরিস্থিতি একেবারেই খারাপ। কোনো কোনো জেলায় মানসিক রোগের একজন চিকিৎসকও নেই।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘মানসিক সমস্যা দেখা দিলে রোগীর আচরণগত পরিবর্তন আসে। এ বিষয়ে রোগী প্রথমে বন্ধু বা পরিবারের লোকের সঙ্গে শেয়ার করে। অনেকেই সচেতন না হওয়ার কারণে তার অস্বাভাবিক আচরণকে গুরুত্ব না দিয়ে তার সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করেন। এটা করা যাবে না। তার সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।’

অনেক পরিবার ঘুমের ওষুধ বা কবিরাজি ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে ভালো করার চেষ্টা করেন জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘এটা বিপজ্জনক প্রবণতা। সহমর্মিতা দেখিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর