মরদেহের সঙ্গে যৌনতার অভিযোগ এনে মুন্না ভগতের বিরুদ্ধে যে মামলা, আদালতে এমন নজির নেই খুব একটা।
ব্রিটিশ ভারতে বিহারে একটি ও পরে আরও একটি ঘটনার নজির পাওয়া যায়। বিহারের ঘটনায় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। দ্বিতীয় মামলায় কারাদণ্ড হয়েছিল। তবে কত বছরের সাজা হয়েছিল, সেই তথ্য পাওয়া যায়নি।
২০ বছর বয়সী মুন্না তার মামার সহযোগী হিসেবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে কাজ করতেন। থাকতেন মর্গের পাশের একটি ছোট্ট কক্ষে।
সিআইডির করা মামলায় বলা হয়েছে, মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য আনা মরদেহের যাদের বয়স বয়স ১৩ থেকে ২০ বছরের মধ্যে তাদের সঙ্গে তিনি যৌনতায় লিপ্ত হতেন।
বেশ কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করে তথ্য প্রমাণ হাতে নিয়ে এই তরুণকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা। ১৯ নভেম্বর গ্রেফতারের পরদিন তাকে ছয় দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
শেরেবাংলা নগর ধারায় যে মামলা করা হয়েছে তাতে মুন্নার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৭৭, ১৭০ ও ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
৩৭৭ ধারা অনুযায়ী প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে যৌনতা, ১৭০ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীর ছদ্মবেশ আর ১০৯ ধারা অনুযায়ী দুষ্কর্মে সহায়তা দণ্ডনীয়।
প্রথম ধারায় সর্বনিম্ন ১০ বছরের কারাদণ্ড থেকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন, দ্বিতীয় ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড এবং তৃতীয় অপরাধে নানা ধরনের শাস্তি হতে পারে।
১৯৪৭ সালের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় ভারতের বিহার রাজ্যে কিষাণলাল সিং নামে একজন একটি বিহারি পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হত্যা করেন। এদের মধ্যে এক তরুণীও ছিলেন।
কিষাণলাল মেয়েটিকে হত্যার পর তার সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হন বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়।
পরে তদন্তে সব জানতে পেরে বিহারের পুলিশ মামলা করে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায়। বিহার আদালত কিষাণলাল সিংকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করে।
বেশ কিছুকাল পরে 'প্রাকৃতিক নিয়ম'-এর বাইরে গিয়ে যৌন-সহবাস করায় নুর মোহাম্মাদ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বাদী হয়ে মামলা করে।
ওই মামলায় দায়রা আদালত আসামিকে দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় নুর মোহাম্মদকে কারাদণ্ড দেয়। আপিল করলে উচ্চ আদালত তার সাজা বহাল রেখে রায় দেয়। (নুর মোহাম্মাদ বনাম রাষ্ট্র, ৪১ নম্বর ডিএলআর পৃষ্ঠা নম্বর ৩০১)।
নিউজবাংলাকে ঢাকা হাই কোর্টের আইনজীবী পারভেজ হাসেম বলেন, মুন্না ভগৎ-এর মামলার বিচারে দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা প্রযোজ্য হবে।
মানবাধিকার কর্মী ও ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী জীবর আনন্দ চন্দ নিউজবাংলাকে জানান যে, ‘যেহেতু ঘটনাটি কোনো স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নয়, প্রাকৃতির বিরুদ্ধ, তাই দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারাতেই বিচারযোগ্য।’
ঢাকা জজ আদালতের আইনজীবী ও হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন ঢাকার সভাপতি মোহাম্মদ পারভেজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুন্না ভগৎ ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত নারীদের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হতেন, এটা সম্পূর্ণ একটি প্রাকৃতিক নিয়ম বিরুদ্ধ কাজ। আর সেই কাজটি মুন্না দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। তাই প্রমাণ সাপেক্ষে তার শাস্তি বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারাতে হলে তার সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন হতে পারে।’
এর পাশাপাশি ১৭০ ধারায় আলাদা সাজা হলে সেটা বিচারক উল্লেখ করে দেবেন বলে জানাচ্ছেন আইনজীবীরা।
তবে ১০৯ ধারাটি প্রযোজ্য হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান আইনজীবীরা। কারণ, এই ধারায় সাজা হলো দুষ্কর্মে সহায়তায়। কিন্তু এই মামলায় মুন্না একাই আসামি। তাই তিনি কাকে সহায়তা করেছেন, এই বিষয়টি স্পষ্ট নয় বলে মত দিয়েছেন একাধিক আইনজীবী।
ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, মুন্না শেষপর্যন্ত শাস্তি পাবেন কিনা- সেটি নির্ভর করছে অভিযোগটি আদালতে কতটা প্রমাণ হয় তার ওপরে।