মনির হোসেন থেকে গোল্ডেন মনির হওয়ার পেছনে কারা জড়িত ছিল তাদের শনাক্তে কাজ করছে র্যাব।
রোববার দুপুরে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ তাদের শনাক্তে কাজ করার কথা জানান।
আশিক জানান, মনিরের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, কর ফাঁকি, ভূমি জালিয়াতিসহ অন্যান্য বিষয়ে তথ্য জানতে আলাদা চারটি সংস্থাকে চিঠি দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘৯০ দশকে তিনি ছিলেন সেলসম্যান। এরপর ক্রোকারিজ ব্যবসা শুরু করেন; যুক্ত হন লাগেজ পার্টির সঙ্গে। সেখানে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কসমেটিকস পণ্য আমদানি করতেন। পরে মনির স্বর্ণ চোরাকারবারে জড়িয়ে পড়েন।’
র্যাব জানায়, গোল্ডেন মনির রাজউকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে জাল স্ট্যাম্প, সিল তৈরি করে ভুয়া দলিলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে প্লট ও জমি দখল করেছেন। তার বাসা থেকে দুটি ও অটো কার সিলেকশন থেকে তিনটি অনুমোদনহীন বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ
কর্নেল আশিক বলেন, ‘গোল্ডেন মনির দেশের বাইরে কী পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে বা কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কসমেটিকস, স্বর্ণসহ অন্যান্য পণ্য দেশে এনেছেন, সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুসন্ধান করতে অনুরোধ করব।
‘অনুমোদনহীন বিলাসবহুল গাড়ির বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে অনুসন্ধানের জন্য বলা হবে। জালিয়াতি করে যেসব ভূমি দখল করেছেন, সেসব বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে অনুসন্ধানের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব আমরা।’
গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে, তা র্যাবের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে ওই চার সংস্থাকে তদন্ত করতে বলা হবে বলে জানান তিনি। র্যাব শুধু ফৌজদারি কার্যবিধি নিয়ে কাজ করেন।
মামলা নিয়ে আশিক বিল্লাহ বলেন, মনিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে, মাদক আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে তিনটি মামলা করেছে র্যাব।
মনিরের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে দুদক একটি, জালিয়াতি করে ভুয়া দলিল তৈরিতে রাজউক একটি মামলা করেছিল।
আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘অভিযানে আমরা জানতে পেরেছি রাজউকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় দুই শতাধিক প্লট ও জমি দখল করেছে মনির। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৩০টি প্লট রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন।’
রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় গ্রেফতার মনির হোসেনের বিলাসবহুল বহুতল ভবন। ছবি: সাইফুল ইসলাম
মনিরের আয়কর রিটার্নে যে সম্পত্তির কথা উল্লেখ রয়েছে, বাস্তবের সঙ্গে তার বিস্তর ফারাক বলে মন্তব্য করেছেন র্যাবের মুখপাত্র।
উত্তরায় জমজম টাওয়ারে গোল্ডেন মনিরের মালিকানার বিষয়ে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা সত্যতা পেয়েছি। র্যাব জমজম টাওয়ারে অভিযান চালিয়েছে। সেই টাওয়ারে মনিরের মালিকানা ১ মাস আগে অংশীদারদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। জমজম টাওয়ারের বাজারমূল্য এখন ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা হতে পারে।’
শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রায় ১২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে মনিরকে গ্রেফতার করে র্যাব। মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্টে মনিররের বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, চারটি গুলি, চার লিটার বিদেশি মদ, ৩২টি নকল সিল, ২০ হাজার ৫০০ রিয়াল, ইউএস ৫০১ ডলার, চায়না ৫০০ ইয়েন, ইন্ডিয়ান ৫২০ রুপি, সিঙ্গাপুরের ১ হাজার ডলার, জাপানি ২ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন, মালয়েশিয়ান ৯২ রিঙ্গিত, হংকংয়ের ১০ ডলার, ইউএইর ১০ দিরহাম, থাই ৬৬০ বাথ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া তার বাড়ি থেকে ৬০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ১ কোটি ৯ লাখ টাকা, পার্কিং থেকে দুটি বিলাসবহুল প্রাডো গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
পাশাপাশি তার মালিকানায় থাকা অটো কার সিলেকশন নামের শোরুম থেকে তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলোও অবৈধ বলে জানিয়েছে র্যাব।
এর বাইরেও বেশ কিছু নকল ও জাল দলিল, সিল স্ট্যাম্প উদ্ধারের কথা জানায় র্যাব।