জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে পড়ালেখা শেষে সেখানেই শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন হিমেল বরকত। দুই দশকের বেশি জড়িয়ে থাকা সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই রোববার শেষ বেলায় তিনি নিথর দেহে গেলেন দুই ঘণ্টার জন্য।
করোনার কারণে কয়েক মাস ধরে বিরান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রোববার বিকেলটি ছিল আলাদা। হিমেল বরকতের শেষ বিদায় এবং জানাজায় অংশ নিতে ক্যাম্পাসে ছুটে যান তার সহকর্মী, শিক্ষার্থী, বন্ধু, অনুরাগীরা। তাদের অনেকেই ভেঙে পড়েন কান্নায়।
অধ্যাপক হিমেল বরকত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ছিলেন কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক। হিমেল বরকত প্রখ্যাত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ছোট ভাই।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর নিজ বাসায় তার হার্ট অ্যাটাক হয়। ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তির পর রোববার ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে তিনি মারা যান।
আরও পড়ুন: জাবি শিক্ষক কবি হিমেল বরকত আর নেই
হিমেলের ভগ্নিপতি মাহমুদ হাসান নিউজবাংলাকে জানান, শনিবার বাসা থেকে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এর পরপরই তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
মাহমুদ হাসান জানান, হিমেলের রক্তচাপ কমে গিয়েছিল। চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেও সেটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। হাসপাতালে ভর্তি করার পর তার আরো দুই বার হার্ট অ্যাটাক হয়। ভোররাতে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতাল থেকে হিমেল বরকতের মরদেহ বোরবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে তার বড় বোনের বাসায় নেয়া হয়। এ সময় সেখানে ভিড় করেন শোকাহত স্বজন, সহকর্মীসহ ঘনিষ্ঠজনেরা।
বাদ জোহর ধানমন্ডির সুলতানা কামাল মহিলা কমপ্লেক্সে সংলগ্ন মসজিদে তাকওয়ায় হিমেলের প্রথম জানাজা হয়। তারপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বেলা আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে কফিন নেয়ার পর উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। হিমেল বরকতের দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরাও এ সময় শ্রদ্ধা জানান।
এরপর বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় টেনিস কোর্টে হয় দ্বিতীয় জানাজা।
শোকে স্তব্ধ ক্যাম্পাস থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্স যাত্রা করে হিমেল বরকতের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোংলার মিঠাখালী গ্রামের পথে। সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা।
হিমেল বরকতের স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে।
তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আছে চোখে ও চৌদিকে, দশমাতৃক দৃশ্যাবলি এবং বৈশ্ববিদ্যালয়। সম্পাদিত বই আদিবাসী কাব্যসমগ্র, চন্দ্রাবতীর রামায়ণ ও প্রাসঙ্গিক পাঠ। প্রান্তস্বর এবং প্রান্তভাবনা নামে তার দুটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা গ্রন্থ রয়েছে।