বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধানকাটা ৮ শ্রমিকের প্রাণহানির দায় কার

  •    
  • ২০ নভেম্বর, ২০২০ ১৭:৩৭

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার এক পাশে পুকুর অন্য পাশে খাদ। গ্রামীণ রাস্তাটি পিচঢালা হলেও একদিকে অনেকটা দেবে গেছে। অন্যদিকে পিচ উঠে খানিকটা গর্তের মতো হয়েছে।

চাঁপাইনবাগঞ্জের শিবগঞ্জে ট্রাক্টর উল্টে আট শ্রমিকের প্রাণহানির জন্য মূলত চালককেই দায়ী করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। এছাড়া অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই ও ভাঙাচোরা সড়কও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তারা।

স্থানীয়রা বলছেন, বেহাল রাস্তা মেরামতে বারবার স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলা হলেও নেয়া হয়নি উদ্যোগ।

বৃহস্পতিবার শিবগঞ্জের দায়পুকুরিয়া ইউনিয়নের বারিক বাজার এলাকায় ওই দুর্ঘটনায় নিহত হন ধানকাটা আট শ্রমিক। আহত হন আরও তিনজন। 

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার এক পাশে পুকুর অন্য পাশে খাদ। গ্রামীণ রাস্তাটি পিচঢালা হলেও একদিকে অনেকটা দেবে গেছে। অন্যদিকে পিচ উঠে খানিকটা গর্তের মতো হয়েছে।

মির্জাপুর গ্রামের আজিজুল হক জানান, বেশ কয়েক মাস ধরেই বারিক বাজার সংলগ্ন রাস্তাটি বেহাল। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম জুয়েলকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। রাস্তা ভালো থাকলে হয়তো এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।

একই অভিযোগ করেন স্থানীয় বদিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানকে বলেছিলাম দুই ট্রলি মাটি গ্যালা দেন, জ্যাগাটা খারাপ হয়ে আছে, কিন্তু শুনেনি’।

বারিক বাজার দায়পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এই ওয়ার্ডের মেম্বার মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘এই খানাখন্দ ভরা রাস্তা দিয়ে চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলামও যাতায়াত করেন। আমি নিজে রাস্তা ঠিক করতে চেয়ারম্যানকে একাধিকবার বলেছি। সব মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করলেই রাস্তাটি মেরামত করা যেত।’

রাস্তা ঠিক করতে কেন নিজে উদ্যোগ নেননি এই প্রশ্নে মোস্তাক বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করা কোনো বিষয় নয়। কিন্তু ওয়ার্ড সদস্য হিসেবে আমার একার পক্ষে এ কাজ করা কঠিন। কারণ ওয়ার্ডের জন্য যে বরাদ্দ থাকে তা খুবই সামান্য।’

বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছিলেন পাশের শাহবাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক। কিন্তু সারা দিন সেখানে দেখা যায়নি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলামকে।

রাস্তা সংস্কার না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় তুলেছিলাম। কথা বলেছিলাম এলজিইডির প্রকৌশলীর সঙ্গেও। মাসখানেক আগের এই কথোপকথন আর আলোর মুখ দেখেনি।’

শিবগঞ্জ উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ জানান, উপজেলার ১২২ কিলোমিটার বেহাল সড়ক মেরামতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাত্র ২২ কিলোমিটার মেরামতে বরাদ্দ এসেছে। এরমধ্যে বারিক বাজার সংলগ্ন রাস্তাটি ছিল না।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক ছাবের আলী প্রামানিক জানান, প্রথমত যানটি ওভারলোড ছিল। প্রায় ৭৫টি বস্তায় ছিল দেড়শ’ মণ ধান। এ ছাড়া গাড়িতে ছিল ১৫ জন শ্রমিক। সব মিলে ওজন দাঁড়িয়েছিল ১৭২ মণের মতো।

তিনি বলেন, ‘এত লোড নিয়ে সংকীর্ণ ওই পথে গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালক। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। অতিরিক্ত লোড আর গতির কারণে খাদে পড়ে উল্টে যায় গাড়িটি।’

দুর্ঘটনায় ট্রাক্টর চালক মাসুদ রানা মারা গেছেন বলে কিছু গণমাধ্যম জানালেও তিনি জীবিত আছেন। তার ছোট ভাই সোহেল রানা জানিয়েছেন, তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শুক্রবার সকালে তার চেতনা ফিরেছে।

শিবগঞ্জ উপজেলার সোনাপুর গ্রামের মাসুদ রানা আগে সবজি বিক্রি করতেন। এরপর তিনি ছোট অটোচার্জার ভ্যানে পণ্য পরিবহন শুরু করেন। মাস তিনেক আগে ট্রাক্টর দিয়ে নতুন এ যানটি তৈরি করেছিলেন। প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচে নতুন ট্রাক্টরটি তৈরিতে তিনি ঋণও করেছেন। সেই ঋণের টাকা এখনও শোধ হয়নি।

আট ধানকাটা শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর এলাকায় সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শ্যালো ইঞ্জিন ও ট্রাক্টর চালিত যানবহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।

এ বিভাগের আরো খবর