সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে শক্তিশালী বোমা, বিপুল পরিমাণ গান পাউডার উদ্ধারের কথা জানিয়েছ র্যাব।
পাঁচ ঘণ্টার অভিযানে সন্দেহভাজন জঙ্গি সদস্যদেরকে কীভাবে কাবু করা হয়েছে, তা জানিয়েছেন বাহিনীটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন ভোরে মানুষ যখন ঘুমিয়ে, তখন এই অভিযানের খবর ব্রেকিং হয়ে আসে গণমাধ্যমে। ভোর পাঁচটা থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযানে কোনো প্রাণহানি হয়নি। শুরুতে আতঙ্ক থাকলেও পরে এলাকাবাসীর মধ্যে নেমে আসে স্বস্তি।
অভিযান শেষে র্যাব কর্মকর্তা তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার জানান, তারা সন্দেহভাজন জঙ্গিদেরকে বারবার ধরা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তারা র্যাবকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। পরে কৌশলে বাড়িটিতে তারা যখন ঢুকে পড়েন, তখন চার জন আত্মসমর্পণ করেন।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় আত্মসমর্পণ করা চার জন
র্যাব জানায়, আত্মসমর্পণ করা চার জনের মধ্যে কিরণ শামীম পাবনা সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে নব্য জেএমবির দ্বিতীয় প্রধান। অন্য তিন জনের মধ্যে নাইমুল ইসলামের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়ায়। আতিউর রহমানের বাড়ি, দিনাজপুরে। আমিনুল ইসলারের বাড়ি সাতক্ষীরার তালায়।
পরে হেলিকপ্টার যোগে আটক চারজনকে ঢাকায় নেয়া হয়।
ভোর পাঁচটা সন্দেহভাজন আস্তানাটি ঘেরাও করে র্যাব। সরিয়ে নেয়া হয় স্থানীয়দের
র্যাব কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেএমবির রাজশাহী বিভাগীয় কমান্ডার জুয়েল আলী ওরফে মাহমুদসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের এই স্থানে তাদের আরও কয়েকজন জঙ্গি অবস্থান করছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে শাহজাদপুরের এই অভিযান চালানো হয়।
সরোয়ার বলেন, ভোর পাঁচটার দিকে অভিযান চালালে জঙ্গিরা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি করতে শুরু করে। হতাহতের ঘটনা এড়াতে তারা কৌশল পাল্টে করে বাড়িটি ঘিরে ফেলেন। এরপর হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে তাদের আত্মসমর্পণের আহব্বান জানান।
এতে সাড়া না দিয়ে তারা র্যাবকে বোমা মেরে এলাকা উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
অভিযান শেষে ব্রিফ করছেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার
পরে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সহ র্যাবের একটি শক্তিশালী দল ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। ওই বাড়ির আশাপাশের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ ডিবি, সিআইডিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক দল ঘটনাস্থলে ছুটে এসে কাজ শুরু করেন।
সকাল ১০টার দিকে নতুন করে অভিযান শুরু করে ওই আস্তানায় প্রবেশ করে র্যাব সদস্যরা। এ সময় জঙ্গিরা আত্মসমর্পণে রাজি হয়।
গোলাগুলির শব্দে স্থানীয়রা জড়ো হলে নিরাপত্তারহীনতার আশঙ্কায় তাদেরকে সরিয়ে নেয়া হয়
পরে বাড়িটি থেকে বিপুল পরিমাণ গান পাউডার, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, রাসায়নিক বিষ্ফোরকদ্রব্য ও দলের একটি পতাকা উদ্ধার করা হয়।
ছয়টি শক্তিশালী তাজা বোমা নিষ্ক্রিয় করে বাড়িটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা।
তবলিগ পরিচয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ
অভিযান শেষে জানানো হয়, গত ২৫ দিন আগে শাহজাদপুরের শেরখালি এলাকার শামছুল হক রাজার বাড়িটি ভাড়া নেন ধরা পড়া চার জন।
তবলিগ জামাতের কার্যক্রমের কথা বলে ছাত্রদের দলে ভিড়িয়ে সেখানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেয়ার চেষ্টা চলছিল বলেও জানিয়েছে র্যাব।
সরোয়ার বলেনম ‘রাতে তাদের সাংগঠনিক মিটিং ছিল। সেই খবর জানতে পেরেই এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।’
এলাকায় আতঙ্ক
ভোরে এই অভিযানের খবরে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তা-ঘাটে লোক সমাগম কমে যায়। তবে অভিযান শেষ হওয়ার পর ঘটনাস্থলে আসতে থাকে লোকজন। এক পর্যায়ে জমে যায় ভিড়।
আটক সন্দেহভাজন জঙ্গিদের দেখতে জনতার ভিড় সামলাতে বেশ হিমশিম খেতে হয় শাহজাদপুর থানা পুলিশকে।
এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের বাড়িওয়ালার এক স্বজন জানান, প্রায় ২৫ দিন আগে দুই ছাত্র এসে বাড়িটি ভাড়া নেন। তাদের অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র নিশ্চিত হয়েই তাদের ভাড়া দেয়া হয়।