অবশেষে বাজারের বাড়ছে সবজির সরবরাহ। ধীরে হলেও কমছে দাম। স্বস্তি ফিরছে ক্রেতাদের মধ্যে।
ক্রেতারা বলছেন, ঠান্ডা বাড়লে সবজি সরবরাহ বাড়বে আরও। তখন দাম আরও কমবে।
করোনাকালে মানুষের আয় কমে যাওয়ার বাস্তবতায় বিশেষ করে সবজির দামে ঊর্ধ্বগতি মানুষকে ভুগিয়ে আসছে। লম্বা সময় ধরে কাঁচাবাজারগুলোতে ছিল অস্থির দশা। এই পরিস্থিতি পাল্টে দিল অগ্রহায়ণের সবজি।
ঢাকার কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুল কাঁচাবাজারের পাইকার এবং খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত এক সপ্তাহে বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে অন্তত ৫০ শতাংশ। ফলে দামও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
পাইকারির তুলনায় অতটা না কমলেও পাড়া-মহল্লা ও ভ্রাম্যমাণ সবজির দোকানগুলোতেও যার পড়তে শুরু করেছে।
শুক্রবার সকালে কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।
বড় আকারের বেগুনি রঙের গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। ছোট আকারের সবুজ বেগুনের দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে।
বিক্রেতারা জানান, গত সপ্তাহেও তারা দুই ধরনের বেগুন ৬০ টাকা ও ৪০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
এক সপ্তাহ আগেও মাঝারি আকারের একেকটি ফুলকপির দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। সেই ফুলকপি বিক্রি করতে দেখা গেল ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। আর বাঁধাকপি ২২ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে।
মূলার দাম এই সপ্তাহে ৪০ টাকা থেকে কমে ২০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় ২০ টাকা কমে কাঁচামরিচ মিলছে ৮০ টাকায়।
পাকা ও কাঁচা দেশি টমেটো পাওয়া যাচ্ছে ৭০ টাকা ও ৫০ টাকা দরে।
কারওয়ান বাজারে ঢোকার মুখে প্রগতি ইন্যুরেন্স ভবনের সামনে কথা হয় পাইকার আবদুল আহাদের সঙ্গে। আগের রাতে পাঁচ হাজার বাঁধাকপি এনেছিলেন বিক্রির জন্য। দেখা গেল, সকাল নাগাদ মাত্র ৭০-৮০টার মতো অবশিষ্ট আছে। বাকিগুলো বিক্রি হয়ে গেছে।
আহাদ জানান, তিনি বাঁধাকপিগুলো এনেছেন যশোর থেকে। আগেই ‘মাঠ’ কেনা ছিল। ভেবেছিলেন বেশি দাম পাবেন। কিন্তু সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি তিনি। তার মতে, প্রতিটি বাঁধাকপি ২৮ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে পারলে ‘পড়তা’ পড়ত।
আহাদসহ আরও কয়েক জন পাইকার জানালেন এই সপ্তাহে ঢাকার আশপাশের মানিকগঞ্জ, নরসিংদীর পাশাপাশি যশোর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরা থেকে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে যা আরও বাড়বে। তখন দাম আরও কমে আসবে।
তবে দাম কম থাকায় বিক্রেতারা খানিকটা ‘রুষ্ট’ হলেও ক্রেতারা তাদের সন্তুষ্টির কথা জানালেন। কাঁঠালবাগান থেকে বাজার করতে আসা নাজমুল হক বললেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও ৫০-৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যায়নি। আজ দেখছি দাম অনেকটাই কমেছে।’
কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। গত সপ্তাহে যা ১২০ টাকা ছিল।
বড় আকারের একেকটি লাউ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। এ ছাড়া মাঝারি আকারের মিষ্টি কুমড়া পাওয়া গেছে ৫০টাকায়। শালগম পাওয়া গেছে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।
এ ছাড়া পালং শাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ও লাউশাক ২০ টাকা, লালশাক ৮ টাকা ও কলমি শাক পাঁচ টাকা আঁটি হিসেবে বিক্রি হতে দেখা যায় কারওয়ান বাজারে।
সবজির আড়ৎ নাহিদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী একরামুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ঝড়-বন্যায় এবার কয়েক ধাপে সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এ কারণে সরবরাহ ছিল কম, দাম ছিল বেশি। যেসব চাষি সবজি ধরে রাখতে পেরেছিলেন তারা এবার অনেক লাভ করেছেন।
হাতিরপুল কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা স্বপন মিয়া বললেন, ’দোকানে শীতের সব সবজি ৫০ ট্যাকার নিচেই আছে। দুই এক দিনে দাম আরও কমব।’