পদ্মা-মেঘনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে চলা ২২ দিন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মা ইলিশ রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছেড়েছে বলে জানিয়েছেন একজন ইলিশ গবেষক।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান জানান, তাদের অনুসন্ধান বলছে, ৫১.২ শতাংশ ইলিশ ডিম ছেড়েছে এবার। এর আগে কখনও এত বেশি ইলিশ ডিম ছাড়েনি।
মৎস্য গবেষকদের তিনটি দল যৌথভাবে কাজ করে এই ফলাফল নিশ্চিত করেছে।
আনিসুল জানান, প্রতি বছরই মা ইলিশের ডিম ছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬ সালে ৪৩.৪৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৪৬.৪৭ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৪৭.৭৫ শতাংশ ও ২০১৯ সালে ৪৮.৯২ শতাংশ ইলিশ নদীতে ডিম পারে।
আগামী মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ উৎপাদনের আশাও করছেন এই গবেষক। তিনি বলেন, ‘যে পরিমাণে ডিম ছেড়েছে তার ১০ শতাংশ টিকানো গেলেও আগামী মৌসুমে প্রায় ৩৭ হাজার আটশ কোটি জাটকা পেতে চলছি আমরা। আগামী মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা সংরক্ষণ মৌসুমে অভিযান সফল করা গেলে দেশ ইলিশের প্রাচুর্যে ভড়ে উঠবে।’
আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমা ও অমাবশ্যাকে কেন্দ্র করে নদীতে ডিম ছাড়ে মা ইলিশ। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে গত ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় জেলার নদীতে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
ইলিশ গবেষক ড. আনিস বলেন, ‘প্রজননের মৌসুমে অভয়াশ্রম কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে প্রতিবছর দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
সরকারি হিসাবে দেশে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। আসন্ন জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারলে দেশে ইলিশের উৎপাদন সাড়ে পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশা করছেন এই গবেষক।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, ‘২২ দিনব্যাপী মা ইলিশ অভয়াশ্রম কার্যক্রম সফল করতে জেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় আমরা দিন-রাত নদীতে টহল দিয়েছি। এবারই প্রথম মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে বিমান বাহিনী ও র্যাব নদীতে অভিযানে যোগ দিয়েছে।’
এত নজরদারি এড়িয়ে কিছু জেলে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও নদীতে ইলিশ ধরেছে জানিয়েও এ বছরের অভিযানকে সার্বিকভাবে সফল দাবি করেছেন এই কর্মকর্তা।
আসাদুল বাকী জানান, চলতি বছর প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ থাকাকালে ২৮৫টি অভিযান চালিয়ে সাত কোটি চার লাখ ৪৬ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে।
পাঁচ হাজার ১৯২ কেজি ইলিশসহ ৩১১ জন জেলেকে আটক কররে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২৪৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ৬৩ জনকে দুই লাখ চার হাজার একশ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।