বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১০ বস্তা ধানের অপেক্ষা, বাড়ি গেল মরদেহ

  •    
  • ১৯ নভেম্বর, ২০২০ ১৯:১৬

‘কাল (বুধবার) রাতে মোবাইলে বলেছিল ধান কাটা শ্যাস, ১০ মণ জিন (মজুরি) প্যায়াছি। সব ধান একঠে কর‌্যা লিয়্যা আসছি, তুমি একটা ভ্যান ঠিক কর‌্যা রাখিও, যাতে ঠহার (রাস্তা) থ্যাকা বাড়ি পর্যন্ত ধান লিয়্যা যাওয়া যায়।’

দিনমজুরি করে ১০ মণ ধান পেয়েছিলেন। সেই ধান ট্রাক্টরে করে বাড়ি ফিরছিলেন। কাছাকাছি চলেও এসেছিলেন। কিন্তু এরপর ট্রাক্টরটি উল্টে যায়। সেই ধানের বস্তার নিচেই চাপা পড়েন। ধান নয়, বাড়ি আসে তার মরদেহ।

তার নাম মিঠুন। তার স্ত্রী তাজরিন নিউজবাংলাকে জানান, ‘কাল (বুধবার) রাতে মোবাইলে বলেছিল ধান কাটা শ্যাস, ১০ মণ জিন (মজুরি) প্যায়াছি। সব ধান একঠে কর‌্যা লিয়্যা আসছি, তুমি একটা ভ্যান ঠিক কর‌্যা রাখিও, যাতে দহার (রাস্তা) থ্যাকা বাড়ি পর্যন্ত ধান লিয়্যা যাওয়া যায়।’

ভোরে আবার তাজরিনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেন মিঠুন। জানিয়েছিলেন, ‘বাড়ির কাছাকাছি চল্যা অ্যাসছি, ভ্যানটা দিয়্যা পাঠাও।’

কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই তাজরিন জানতে পারেন ট্রাক্টরটি উল্টে তার স্বামী ও শ্বশুর তোজাম্মেল হকসহ আট জন শ্রমিক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েক জন শ্রমিক। তারা সবাই ট্রাক্টরে ধানের বস্তার ওপর বসেছিলেন।  

মিঠুনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদের কাছেই বালিয়া দিঘি গ্রামের কলোনি পাড়ায়। ২১ দিন আগে বাবার সঙ্গে ধান কাটতে গিয়েছিলেন নওগাঁ।

দুপুরে ধান নয়, বাড়িতে আনা হয় মিঠুন ও তার বাবার মরদেহ। কান্নায় ভেঙে পড়েন মিঠুনের মা সানোয়ারা বেগম ও তার দাদিসহ স্বজনরা।

মিঠুনরা এতটা গরিব যে, তাদের বাড়িতে দুটি মরদেহ রাখা এবং মরদেহ দেখতে আসা মানুষের সংকুলান হবে না। এ কারণে মরদেহ দুটি প্রতিবেশীর বাড়িতে রাখা হয়।

মিঠুনের বাবার মামা কামাল উদ্দীন বলেন, ‘ওরঘে (মিঠুন) বাড়িতে জ্যাগা হবে না দেখ্যাই তো এখানে লাশ রাখা হয়েছি, ম্যালা মানুষ শেষ দ্যেখা দেখতে আসবে, রহার জ্যাগা হবে না, তাই এখানে রাখছি।’

এই দুর্ঘটনায় নিহত আট জনের মধ্যে সাত জনের বাড়ি বালিয়াদিঘি গ্রামে। এই গ্রামের বাসিন্দা তামিম হোসেন বলেন, একসঙ্গে তাদের গ্রামে এর আগে এত মানুষের মৃত্যু কেউ দেখেননি। এ ঘটনায় গ্রামের মানুষেরা শোকে বোবা হয়ে গেছেন।   

এদিকে এ দুর্ঘটনায় আহত আলিম হোসেনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তাকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, তারা ১৫ জন শ্রমিক। রাত দুইটার দিকে নওগাঁর নিয়ামতপুর থেকে ধান নিয়ে ট্রাক্টরে করে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি বসেছিলেন চালকের পাশে। বারিক বাজারের কাছে ভাঙাচুরা রাস্তায় ট্রাক্টরটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। ট্রাক্টরের ওপরে যারা ছিলেন, তারা সবাই ধানের বস্তার নিচে চাপা পড়েন।

এদিকে দীর্ঘদিন ভাঙ্গাচুরা রাস্তাটি মেরামতে উদ্যোগ নেননি ইউপি চেয়ারম্যান। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্সার আলী নামের এক জন বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা গ্রামবাসী ম্যালা বার খয়্যাছি, চেয়ারম্যান দুগাড়ি খুয়া ফেলেনি, যদি রাস্তাটা একটু ভালা করত তাহলে এতগুলা মানুষ নাও মরতে পারত।’

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বি জানান, নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।

দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক

স্বামীর সঙ্গে সুমি আক্তারের শেষ কথা হয় বুধবার রাতে। ধান নিয়ে সকালে বাড়ি পৌঁছার কথা। কিন্তু মোবাইলে রিং করে সেটি বন্ধ পান। এরপর খবর পান বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ট্রাক্টর উল্টে গেছে। অনেক শ্রমিক হতাহত হয়েছেন। পাগলের মতো ছুটে যান সুমি। ততক্ষণে তার স্বামীকে হামিদুল হককে ধানের বস্তার নিচে থেকে উদ্ধার করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

হামিদুলসহ দুজনকে উদ্ধার করে প্রথমে নেয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হামিদুলদের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। স্বামীর পাশেই মেঝেতে বসেছিলেন সুমি। তিনি জানান, তাদের দুই শিশু সন্তান রয়েছে।

হামিদুলের পাশেই আরেক আহত আব্দুল লতিপের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার পাশে বসে আছেন স্ত্রী নাহার বেগম ও ছেলে আকাশ ইসলাম। আকাশ বলেন, তার বাবাকে অজ্ঞান অবস্থায় বস্তার নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। এখনও জ্ঞান ফেরেনি।

হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস জানান, দুই জনের অবস্থাই কিছুটা আশঙ্কাজনক।

এ বিভাগের আরো খবর