কুমারগাওয়ে জাতীয় গ্রিড লাইনে অগ্নিকাণ্ডের ফলে এখনও অন্ধকারে রয়েছে সিলেটের বেশির ভাগ এলাকা।
অগ্নিকাণ্ডের পর মঙ্গলবার সকাল থেকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে সিলেট। এর প্রায় ৩১ ঘণ্টা পর বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নগরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরলেও অন্ধকারে রয়েছে জেলার বেশির ভাগ এলাকা।
বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে সিলেটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরো স্বাভাবিক হতে পারে বলে জানিয়েছেন সিলেটের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
এদিকে, বিদ্যুৎ না থাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সিলেটের বাসিন্দাদের। নগরীর বেশির ভাগ এলাকায় তীব্র পানি সংকট বিরাজ করছে।
সিলেটের সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ে সিটি করপোরেশনের ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড। এই তিনটি ওয়ার্ড মঙ্গলবার সকাল থেকে বিদ্যুৎহীন রয়েছে।
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের খোজারখলা এলাকার বাসিন্দা মালেক আহমদ নিউজবাংলাকে জানান, তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ ও পানির সংকটে আছেন। বাইরে থেকে পানি এনে কতদিন চলা যায়? সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে শৌচাগারের পানি নিয়ে। টয়েলেটে ফ্ল্যাশ করতে না পারায় পুরো বাসা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কদমতলী এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম জানান, তার বাবা শ্বাসকষ্টের রোগী। প্রতিদিন তাকে নেভুলাইজার দিতে হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় তিন দিন ধরে তা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে সিলেটে শীতও পড়েছে। ফলে তার বাবার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে। এখন খুব শঙ্কায় আছেন।বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, বুধবার রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-১, ২ ও ৪-এর আওতাধীন কিছু এলাকায় আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। বাকি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করতে কাজ চলছে। তবে পুরো স্বাভাবিক হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।
সিলেটের কুমারগাঁও উপকেন্দ্রে মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় ঘটা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ৩১ ঘণ্টা পর সিলেট মহানগরীতে বিদ্যুৎ বিতরণ শুরু করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি)। বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর জল্লারপাড়, মির্জাজাঙ্গাল, দাড়িয়াপাড়া, লামাবাজার, রিকাবিবাজার, কুয়ারপাড়, শেখঘাট, বাগবাড়ি, নবাব রোড, কানিশাইল, দক্ষিণ সুরমা বিভিন্ন এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়নি। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে নগরের উপকণ্ঠের এলাকাগুলো ও বিভিন্ন উপজেলা।
তবে নগরীর বেশির ভাগ এলাকায় এর মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, যেহেতু মেরামত কাজ এখনও শেষ হয়নি, একসঙ্গে সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখা যাচ্ছে না। আপাতত রেশনিং পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগ সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতি মেরামত ও পুনঃস্থাপন শেষে বুধবার সন্ধ্যা থেকে আমরা সীমিত আকারে বিদ্যুৎ সবরাহ শুরু করেছি। এখনও আমাদের কর্মীরা গ্রিড লাইনে মেরামত কাজ করছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে টানা কাজ করে যাচ্ছেন সবাই। আশা করছি আজ (বৃহস্পতিবার) রাত নাগাদ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরো সচল করা সম্ভব হবে।’
পানি সংকট প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, ‘আমাদের সিটি করপোরেশন এলাকায় আংশিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে, সেসব এলাকার সিটি করপোরেশনের গভীর নলকূপকগুলো থেকে সঙ্গে সঙ্গে পানি সরবরাহ চালু করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পাওয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও চালু করা হয়েছে। সাধারণত রাত আটটা পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের আওতায় পানির পাম্পগুলো চালানো হতো, সেগুলো রাত দুইটা পর্যন্ত চালানো হয়েছে। আশা করছি, শুক্রবার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলে সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ স্বাভাবিক করতে পারব।’
মঙ্গলবার কুমারগাওয়ে বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিডের (পিজিসিবি) নিয়ন্ত্রাধিন জাতীয় গ্রিড লাইনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। আগুনে দুটি উচ্চ ক্ষমতার ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার, কন্ট্রোল প্যানেল পুড়ে যায়।
এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।