চার দেয়ালের ভেতর উৎসবের আমেজ। ছেলে-মেয়ের দুই হাত এক করে দিল কারা কর্তৃপক্ষ। বিভেদ ভুলে জীবন সাজানোর সুযোগ করে দিল আদালত।
ধর্ষণ মামলার আসামির সঙ্গে বাদীর বিয়ের ভিন্ন এই আয়োজন ঘিরে ফেনী কারাগারের বন্দি আর কারা কর্তৃপক্ষ ভীষণ আপ্লুত। এই ধরনের ঘটনা এর আগে ঘটেনি সেখানে।
স্বভাবতই জাঁকজমক ছিল না খুব একটা। কিন্তু আবেগি আয়োজন। হাসি-কান্নার মিশেল।
এত ঝামেলার দরকার অবশ্য ছিল না। সুখের সংসার পাততে পারত বর করে আগেই। কিন্তু ছেলের বাবার জেদের কারণেই এত কিছু।
দুই জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক। গত ২৬ মে ছেলের বাড়িতে যান মেয়েটি। এলাকাবাসী তা দেখে দুই জনকে বিয়ে দিতে চান।
কিন্তু ছেলের বাবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। জেদ ধরে বলেন, এই বিয়ে মানবেন না তিনি। মেয়েটি করেন, ধর্ষণের মামলা। ছেলেটিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আদালতে যান ছেলের বাবা। জামিন দেয়নি বিচারিক আদালত। পরে উচ্চ আদালতে যান বাবা।
গত ১ নভেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ জানায়, ওই মেয়েকে বিয়ে করলে জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এরপর ছেলের বাবা পুত্রবধূকে মেনে নিতে রাজি হন। আর কারা কর্তৃপক্ষ আয়োজন করে বিয়ের।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ফেনী কারাগারে জেল সুপারের কার্যালয়ে আসে বর ও কনে পক্ষ। মেহেদী রাঙানো হাত নিয়ে আসেন মামলার বাদী মেয়েটিও। ছিলেন আইনজীবীরাও।
আসামিপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকন জানান, ছয় লাখ টাকা দেনমোহরে এক লাখ টাকা উসুলে হয়েছে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। পরে মিষ্টি মুখ করে আনন্দ ভাগাভাগি করেন স্বজনেরা।
বর কনেকে খানিকটা সময় বোঝাপড়ার সুযোগও করে দেয়া হয়। তবে বিয়ের পর সঙ্গীকে রেখেই হতাশ মনে ফিরতে হয় তাকে। স্বামীকে দ্রুত মুক্ত করে দিয়ে তার কাছে আসার সুযোগ করে দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
এই আয়োজনে উপস্থিতি ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান। বিয়ে পড়ান কাজী আবদুর রহিম।
জেল সুপার আনোয়ারুল করিম বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে দু্ই পরিবার খুশি হয়েছে, তারা সব ঠিক করে এখানে এসেছেন। আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে বিয়ের কাজটি শেষ করতে পেরেছি। পরিবারের সুখ শান্তি কামনা করছি।’
ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমার খুবই ভালো লাগছে। কারাগারে বিয়ে আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। আমরা এ সকল কাগজ উচ্চ আদালতে পাঠাব।’
ছেলের বাবা বলেন, ‘ছেলে মুক্ত হয়ে আসার পরে আমরা বাড়িতে জাঁকজমক করে অনুষ্ঠান করব। বউকে তুলে নিয়ে আসব।’
মেয়ের বাবা বলেন, ‘আমি চাই আমার মেয়ের সুখ শান্তি। জামাইকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে আমি ও আমার মেয়ের যা যা করার আছে, আমরা তার সবই করব।’
মেয়ে বলেন, ‘আমি খুশি হয়েছি। আদালতকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি চাই সরকারও আমার স্বামীকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে আমার কাছে ফিরিয়ে দিক।’
দেনমোহর নির্ধারণের বিষয়ে বাদীর আইনজীবী আমির হোসেন সুমন বলেন, ‘দুই পক্ষ পরস্পর পরস্পররের সঙ্গে কথা বলে এটি চূড়ান্ত করেছে। এখানে কারও কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। সমন্বয়ের মাধ্যমে দেনমোহর নির্ধারণ হয়েছে।’