হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেও ব্যাংকার প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেছে উচ্চ আদালত। দেশটা মগের মুল্লুক কি না, সে প্রশ্নও করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের বেঞ্চ এই মন্তব্য করে।
নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করবে কেউ, আর সে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে, মগের মল্লুক নাকি? কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাকে অবশ্যই দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তাকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ থাকা পি কে হালদার গত ২৫ অক্টোবর দেশে ফেরার আবেদন করেছিলেন।
গত ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে তার করা আবেদনে বলা হয়েছিল, দেশে ফিরে পিকে হালদার ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিনিয়োগকারীদের যে টাকা নিয়ে গেছেন তা উদ্ধার করতে দেশে ফিরতে চান। এজন্য দুদক বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে থাকতে চান আদালতের কাস্টডিতে।
সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত ব্যাংকার পি কে হালদার
২১ অক্টোবর পি কে হালদারকে দেশে ফেরার অনুমতি দেয় হাই কোর্ট। তবে বিমান থেকে মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করে আদালতে নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়া হয়।
পরে ২৫ অক্টোর পি কের আইনজীবীরা জানান, তিনি অসুস্থ। তাই দেশে আসতে পারছেন না আপাতত।
গত ১৭ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম জানান, আলোচিত এই ব্যাংকারকে দেশে ফেরাতে তারা আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোলের সাহায্য নেবেন।
- আরও পড়ুন: দেশে ফিরলেই গ্রেফতার পি কে হালদার
বিষয়টি নিয়ে শুনানি শেষে বিচারক নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘একজন মানুষ হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আইনের আওতার বাইরে থাকবেন, কোর্টের আওতার বাইরে থাকবেন, সমস্ত জাতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করবেন, এটা হতে পারে না। এটা অবশ্যই কোর্টের নজরে আনতে হবে। তার বিরুদ্ধে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। তাকে ফিরিয়ে আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা সেটা আমাদের জানা দরকার।’
পরে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ও তাকে গ্রেফতারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে আদেশ দেয়।
আগামী ২ ডিসেম্বর দুদক চেয়ারম্যানসহ সরকারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন খুরশীদ আলম খান, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
বর্তমানে কানাডায় আছেন পি কে হালদার। তার বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে বিভিন্ন কৌশলে দেড় হাজার কোটি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে আরও দুই হাজার কোটি টাকা বের করে বিদেশে পাচারের অভিযোগ আছে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা অবস্থায় আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন পি কে হালদার। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে থাকা ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কৌশলে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি ও তার সহযোগীরা।
হালদারের বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
চলতি বছরের শুরুতে পি কে হালদার বিদেশে পালিয়ে যান বলে তথ্য পাওয়া যায়। এরপর তার পাসপোর্ট, সম্পত্তি জব্দ করা হয়। আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে তাকে অপসারণও করা হয়।