রাজনীতিবিদরা নন, সরকারি চাকুরেরাই বিদেশে বেশি অর্থ পাচার করেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে গোপনে কানাডার টরন্টোতে অবস্থিত বাংলাদেশিদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হয়েছে। আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে।
‘কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয়, সেটিতে আমি অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে আমাদের সরকারি কর্মচারীদের বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চারজন। এ ছাড়া কিছু আছেন আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ী। আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করছি।
‘তবে পাচারে শুধু কানাডা নয়, মালয়েশিয়াতেও একই অবস্থা। তবে তথ্য পাওয়া খুব কঠিন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যে তথ্য বের হয়, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, আসলে সংখ্যাটি তত নয়।’
পাচারের দায় সেসব দেশের সরকারও এড়াতে পারে না মন্তব্য করে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘যেমন, সুইজারল্যান্ডে কে ব্যাংকে টাকা রাখল, সেই তথ্য আমাদের দেয় না। তারা ট্রান্সপারেন্সির কথা বলে, কিন্তু যদি বলি কার কার টাকা আছে, সেই তথ্য দাও, তখন তারা দেয় না। এটি একটি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।’
‘বাইডেনের জয় বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ’
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের বিজয়কে বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জো বাইডেন একজন পরিপক্ব রাজনীতিবিদ।’
মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার আরও তৎপর হবে- এমন আশা প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু মিয়ানমারে মানবাধিকার খুব বেশি ব্যাহত হয়েছে, আমাদের ধারণা নতুন সরকার এ বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। তবে আমি বলব, ট্রাম্প সরকার রোহিঙ্গা বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়েছে।
‘তবে রাজনৈতিক চাপ যেটুকু দরকার ছিল, সেটি আমরা পাইনি। শুধু কয়েকজন জেনারেলকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কোনো অর্থনৈতিক অবরোধ দেয় নাই। ১৯৯২ সালে অর্থনৈতিক অবরোধ ছিল এবং সে কারণে মিয়ানমার নমনীয় ছিল। কিন্তু এখন সেগুলো নেই।’
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পাঁচজন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দুজনের খবর আমরা জানি। একজন যুক্তরাষ্ট্র আছেন ও আরেকজন কানাডায়। তারা আত্মস্বীকৃত খুনি।
‘কানাডায় কাজ করছি, কিন্তু সুরাহা হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রে কিছুটা আশার বাণী পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর খুনিকে যে কারণে তারা রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল, সেটি তারা পুনর্বিবেচনা করছে।’
তিনি বলেন, বাকি তিনজনের খবর বাংলাদেশ জানে না।
অভিন্ন নদী তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির প্রসঙ্গ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কোনো ম্যাজিক থাকবে না। হঠাৎ করে এটি সই হবে।’
নদী বিষয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি আগামী মাসে ভারতে যাবে এবং আলাপ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাকি সাতটি নদীর বিষয়ে একটি কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে।
ডিআরইউর সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী।