রাজধানীর ধোলাইপাড় এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য কারও বিরোধিতায় বন্ধ হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। জানিয়েছেন, বরং আরও নতুন নতুন ভাস্কর্য নির্মাণ হবে।
বুধবার নারায়ণগঞ্জে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এম ভি ইকরাম জাহাজ পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
ধর্মভিত্তিক দলের বিরোধিতা নিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অনেকেই অনেক কিছু বলে। এগুলো আমলে নেওয়ার মতো না। আমাদের সরকার অত্যন্ত সক্ষম এবং দায়িত্বশীল সরকার। সরকার যেটা সিদ্ধান্ত নেয় সেটা বাস্তবায়ন করার সক্ষমতাও রাখে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘রাস্তাঘাটে এখানে-সেখানে কারও কোনো কথা আমলে নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হবেই।’
ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাধীন ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। ছবি: নিউজবাংলা
ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে ধর্মভিত্তিক দল ইসলামী আন্দোলনের সাম্প্রতিক কর্মসূচি নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন দল একে মূর্তি আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি নির্মাণ হলে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে।
জাতির জনকের ভাস্কর্য নিয়ে এই ধরনের মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেছেন, যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করবে, তাদের ঘাড় জনগণ মটকে দিতে পারে।
তবে সরকাররে পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও কোনো বক্তব্য দেয়নি। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
আরও পড়ুন: তাদের একচুল ছাড় নয়: সরকারকে জাসদ
ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দল বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ ঠেকাতে যে কর্মসূচি পালন করেছে তা সরকারের নমনীয়তার ফল বলে মনে করছে আওয়ামী লীগের জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ।
দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য স্থানান্তরিত করার মধ্য দিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ীদের আশকারা দেওয়ার ফলেই আজ এই অপশক্তি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করার দুঃসাহস দেখাতে পারছে।’
এই বেদীতেই নির্মিত হবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের এক মানববন্ধনে বলা হয়েছে, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় যদি থাকতে হয়, তাহলে বঙ্গবন্ধুর সব ভাস্কর্যে স্যালুট দিয়ে চলতে হবে। না হলে পাকিস্তানে চলে যেতে পারো।’
এক প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ধোলাইপাড়েরটা হবেই। আর পূর্বাচলের পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও বঙ্গবন্ধুর আরেকটি ভাস্কর্য নির্মাণ হবে।
মন্ত্রী জানান, ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে মিল রেখে এই ভাস্কর্যটি হবে ২৬ ফুট উচ্চতার।
মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের বহুস্থানে বঙ্গবন্ধুর এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত ভাষ্কর্য রয়েছে। এসব ভাস্কর্য আমাদের সংস্কৃতির অংশ।’
সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী সংসদ সদস্য শাজাহান খান বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারিসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মতিবিজড়িত অনেক ভাস্কর্য রয়েছে, সেগুলো নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলে না। তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে প্রশ্ন করে। আমরা বাাঙালি, আমরা মনে প্রাণে একটু আবেগী। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বন্ধ করার যে দাবি তোলা হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।’
মন্ত্রী বলেন, নৌকমান্ডো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের সাক্ষ্য এম ভি ইকরাম জাহাজকে আন্তর্জাতিকমানের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে। এজন্য উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ ও ডিজাইন করার জন্য কারিগরি দল গঠন করা হচ্ছে।
ইসলামী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে সুপ্রিম কোর্টের সামনের এই ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়া হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি স্মৃতিচিহ্ন সরকার সংরক্ষণ করবে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চাঁদপুর জেলার মেঘনা নদীতে কমান্ডার মমিনুল্লাহ পাটওয়ারীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজটি ধ্বংস করেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকসহ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নৌ-কমান্ডো বীর মুক্তিযোদ্ধা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।