৪৭ বছরেও স্নাতক পরীক্ষার সনদ পাননি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী জিল হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে চ্যালেঞ্জ করা মামলায় ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও উচ্চ আদালত থেকে কোনো রায় পাননি তিনি। এমন বাস্তবতায় মৃত্যুর আগে বিচার ও রায়ের বাস্তবায়ন দেখে যেতে চান জিল।
মামলার বিচার পেতে তিন যুগেরও বেশি সময় আদালতে ঘুরছেন ৭০ বছর বয়সী জিল। ৪৫ বছর ধরে মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। কিন্তু বিচার শেষ হয়নি। প্রতিপক্ষের আইনজীবীর শুনানিতে অনুপস্থিত না থাকায় ১২ বছর ধরে হাইকোর্টে ঝুলে আছে মামলা।
জিল হোসেনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চিলগাছা গ্রামে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক পরীক্ষায় পাস করলেও কর্তৃপক্ষের ভুলে অকৃতকার্য দেখানো হয় তাকে। যথারীতি তা মেনে নিয়ে পরের বছর আবারও পরীক্ষা দিতে বসেন তিনি। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়া তাকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষাজীবনে স্নাতকের গণ্ডি পার হতে না পারা ও আত্মসম্মানের কথা ভেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে চ্যালেঞ্জ করেন জিল হোসেন। জানতে পারেন প্রথম বছরই তিনি পাস করলেও প্রাপ্ত নম্বরের ভগ্নাংশ যুক্ত না করেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে অকৃতকার্য দেখিয়েছে। নিজের শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সনদটি পেতে তাই জিল হোসেন দ্বারস্থ হন আদালতের।
শিক্ষাজীবনের সনদ আর আত্মমর্যাদা ফিরে পেতে ১৯৭৫ সালে আদালতে মামলা করেন তিনি। আদালত ১৯৮৬ সালে রায় দিলেও স্নাতকের সনদটি পেতে লাগে ২২ বছর। তত দিনে জিল হোসেনের বয়স পৌঁছে যায় ৪৭ বছরে। শেষ হয়ে যায় সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনও চাকরির সুযোগও।
জীবনের প্রয়োজনে শুরু করেন কৃষিকাজ। বাবার রেখে যাওয়া জমিতেই ফসল ফলিয়ে মিটিয়েছেন পরিবারের চাহিদা।
ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবারও আদালতে যান জিল হোসেন। ২০০০ সালে বিচারিক আদালত ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে আদেশ দিলেও ২০০৮ সালে হাইকোর্টে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর শুধু প্রতিপক্ষের আইনজীবীর শুনানিতে অনুপস্থিতির কারণেই ১২ বছর হাইকোর্টে ঝুলে আছে মামলাটি। এরই মধ্যে বার্ধক্যে উপনীত হওয়া জিল হোসেনের মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে জীবন প্রায় অচল।
নিউজবাংলাকে জিল বলেন, ‘পাস করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে ফেল করিয়ে দেয়। আমি আদালতে গেলে পক্ষে রায় এলেও এখনো পর্যন্ত আমি ন্যায্যবিচার পাইনি। শেষ জীবনে ন্যায্য বিচারটি চাই।’
২০১০ সালে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের পর মামলাটি লড়ছেন জিল হোসেনের ছেলে কিরণ খন্দকার।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত ১০-১২ বছর আমিই মামলাটি নিয়ে ছোটাছুটি করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ফলাফল পাইনি। জানি না আর কতকাল আদালতে এভাবে ঘুরতে হবে। বাবা মৃত্যুর আগে যেন বিচারটা দেখে যেতে পারে।’
জিল হোসেনের আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আপিল আবেদনকারী ছাড়া প্রথম শুনানি গ্রহণ করা যাবে না। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আপিলকারীর আইনজীবী দীর্ঘদিন মামলাটি হাইকোর্টে ঝুলিয়ে রেখেছেন, যেটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক।’
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘মামলার এমন দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ন্যায়বিচার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটা ক্ষতিপূরণ আদেশের বিপরীতে আপিল করে মামলাটি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এটা দুঃখজনক।’