সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম শিপন চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। কিন্তু সেখানকার রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্ররোচনায় ও সরাসরি হস্তক্ষেপে তাকে আদাবরের নামমাত্র ক্লিনিক মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, মাইন্ড এইডে নেয়ার পর চিকিৎসার নামে মারধরের শিকার হয়ে মারা যান আনিসুল। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে মাইন্ড এইডে ছুটে যান রেজিস্ট্রার মামুন। নিজেই অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃত মানুষকে এনে আবার হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করান। এটা হত্যাকাণ্ড অবশ্যই, মামুন যা করেছেন, এটা এক ধরনের প্রতারণাও।
ডিসি হারুন আরও জানান, মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকার নিজ বাসা থেকে রেজিস্ট্রার মামুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তিনি বলেন, এএসপি আনিসুলকে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ঠিকঠাক সেবা দেওয়া হয়নি। তাকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখার পর একটা বেডে শুইয়ে দুইটা ইনজেকশন দেয়া হয়। এরপর আনিসুল ঘুমিয়ে পড়েন।
পরে হাসপাতালের রেজিস্ট্রার মামুন এসে দৌড়াদৌড়ি করে, ফোনে যোগাযোগ করে আনিসুলকে মাইন্ড এইডে পাঠান। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এর দায় এড়াতে পারেননি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মামুন সরকারি প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার হওয়া সত্ত্বেও তিনটা হাসপাতালে রোগী দেখেন। এখানে তার ২৪ ঘণ্টা ডিউটি থাকা সত্ত্বেও এসব ফাঁকি দিয়ে টাঙ্গাইলের ঢাকা ক্লিনিক, ঢাকার মাইন্ড ওয়েল এবং মাইন্ড এইড হাসপাতালে রোগী দেখেন।
‘মাইন্ড এইডের মতো অনুমোদনহীন হাসপাতালে রোগী দেখেন কেন জানতে চাইলে মামুন সদুত্তর দিতে পারেননি। সবাই দেখে তাই তিনিও দেখেন।’ জানান ডিসি হারুন।
সরকারি হাসপাতাল থেকে কেন ওই নামমাত্র হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, জানতে চাইলে মামুন বলেন, রোগীর বেটার ট্রিটমেন্ট চেয়েছিলেন। তাহলে কি সরকারি হাসপাতালে বেটার ট্রিটমেন্ট হয় না? এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
ডিসি হারুন আরও বলেন, রেজিস্ট্রার মামুনসহ দালালচক্র সব রোগীকে বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠাতেন না। অবস্থা সম্পন্ন রোগীদের মাইন্ড এইডসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাতেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি হারুন বলেন, কোনো রোগীকে এসব ক্লিনিকে পাঠালে মামুন ২০-৩০ শতাংশ কমিশন পেতেন।
‘একজন রোগীকে সরকারি হাসপাতালে নেয়ার পরও কেন ভালো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি, এগুলো আমরা ধরছি। কয়েক দিনে আমরা হাসপাতালের এমন ২০-২৫ জন দালালকে গ্রেফতার করেছি।’ জানান ডিসি হারুন।
তিনি আরও জানান, এএসপি আনিসুল হত্যার ঘটনায় করা মামলার এজাহারভুক্ত ১৫ জন আসামির মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চার জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি তিন জনের মধ্যে এক জন বিদেশে ও দুই জন পলাতক।
তিনি আরও বলেন, ‘জবানবন্দি ও জিজ্ঞাসাবাদে আনিসুল হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, কাদের ইন্ধনে তাকে সরকারি মানসিক হাসপাতাল থেকে মাইন্ড এইডে নেয়া হয়েছিল, কাদের যোগসাজশে, কে তাতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন আমরা সবার নাম পেয়েছি। এই পরিপ্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রার মামুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
মামুনকে দুই দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
এএসপি আনিসুল মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার ৯ নভেম্বর বেলা পৌনে ১২টার দিকে তাকে মাইন্ড এইডে নেয়া হয়। পরে মারা যান তিনি। পরিবারের অভিযোগ, মারধরে মৃত্যু হয়েছে আনিসুলের।