বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিভেদে ধুঁকছে সিলেট বিএনপি

  •    
  • ১৭ নভেম্বর, ২০২০ ১৭:১০

গত বছরের ২ অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে কামরুল হুদা জায়গীরদারকে আহ্বায়ক করে ২৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এরপরই মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ দেখা দেয়ায় আটকে যায় মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের উদ্যোগ।

সিলেট মহানগর বিএনপির কমিটি সবশেষ গঠন হয়েছিল ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। দুইবছর মেয়াদি এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। নেতাদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকও বেশিরভাগ সময় থাকেন দেশের বাইরে। কমিটিতে নিষ্ক্রিয় নেতা আছেন আরও কয়েকজন। আছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলও। সব মিলিয়ে স্থবির সিলেট নগরে বিএনপির কর্মকাণ্ড।

এ অবস্থায় পুরনো কমিটি ভেঙে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্র। তবে সেই উদ্যোগও আটকে আছে প্রায় এক বছর ধরে। যদিও চলতি বছরেই মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।

কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরুর পর কে হচ্ছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এই প্রশ্ন ঘুরছে নেতাকর্মীদের মুখে। সম্ভাব্য তালিকায় পাঁচ নেতার নাম আছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। এতে সভাপতি পদে নাসিম হোসেইন ও সাধারণ সম্পাদক পদে বদরুজ্জামান সেলিম নির্বাচিত হন।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে আলোচনায় থাকা নেতারা 

 

২০১৮ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। তখন তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে দলীয় চাপে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

নির্বাচনের পরপরই যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান সেলিম। এরপর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলেও আর দেশে ফেরেননি সেলিম। তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা আজমল বখত সাদেকও দীর্ঘদিন আমেরিকায় ছিলেন। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে সিলেটে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় মহানগর বিএনপি। এই সময়ে দায়সারাভাবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করা ছাড়া সিলেটে বিএনপির তেমন কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিও বিভিন্ন বলয়ে আলাদা আলাদাভাবে পালন করতে দেখা গেছে।

আবার মাঠের কর্মসূচির চেয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে বিবৃতি ও ‘দোয়া মাহফিল’ আয়োজনেই বেশি ব্যস্ত দেখা গেছে বিএনপি নেতাদের। গত এক বছরে বিভিন্ন নেতার মৃত্যু, অসুস্থতা, কারামুক্তিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সিলেটে অন্তত ২১টি দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে সংগঠনটি।

এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কমিটির মেয়াদ এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে। এরপর আমরা নিজে থেকেই কেন্দ্রেীয় মহাসচিবের কাছে লিখিত আবেদন করে নতুন কমিটি গঠনের অনুরোধ করেছি। তবে কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত কমিটির ব্যাপারে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’

নাসিম হোসাইন স্বীকার করেন, ‘পুরনো কমিটির কিছু নেতা এখন আর রাজনীতিতে সক্রিয় নন। তাছাড়া অনেকদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এসব কারণে দলের কর্মকাণ্ডেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’

তিনি দাবি করেন, ‘মাঠের কর্মসূচিতে প্রশাসনের বাধা নেই, তবে হয়রানি করে। তাই আমরা ঘরোয়া কর্মসূচির মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছি।’

তবে সিলেট মহানগর বিএনপির সম্পাদকীয় পদে থাকা দুই নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণেই সিলেটে বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়েছে। কর্মসূচি দিয়ে নেতারা মাঠে আসেন না। কর্মীদের বিপদে পাশে দাঁড়ান না। ফলে কর্মীরাও তাদের ডাকে সাড়া দেয় না।

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ২ অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে কামরুল হুদা জায়গীরদারকে আহ্বায়ক করে ২৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এরপরই মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ দেখা দেয়ায় আটকে যায় মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের উদ্যোগ।

নেতারা জানান, আগে সিলেটে বিএনপি ছিল প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস আলী বলয়ে বিভক্ত। ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সাইফুর রহমান আর ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন বিএনপির তখনকার সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী।

এই দুই নেতার অনুপস্থিতিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সিলেট বিএনপি। বর্তমানে সংগঠনটি অন্তত ৫/৬টি বলয়ে বিভক্ত। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান জামানসহ কয়েকজন নেতার অনুসারীরা ঠাঁই পাননি। এর আগে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটিতেও তাদের অনুসারীদের স্থান হয়নি। ফলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেন তারা। এই কমিটির বিরুদ্ধে সিলেটে বিক্ষোভ হয়। আহ্বায়কের বিরোধিতা করে নিষ্ক্রিয় আছেন এই কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য।

তবে কেন্দ্রীয় নেতারা সব বলয়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে গ্রহণযোগ্য একটি কমিটি গঠনের চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে পাঁচ জন নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকী ও সাধারণ সম্পাদক বদরোজ্জামান সেলিম।

এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি জিয়ার আদর্শের একজন কর্মী। পদপদবী আমার কাছে মুখ্য নয়। তবে এমন কাউকে দলের দায়িত্ব দেয়া উচিত যিনি দলের সকল নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্য। যিনি দলকে চাঙা করতে ও আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন। আশা করছি কেন্দ্রীয় নেতারা এসব বিবেচনা করেই আহ্বায়ক বাছাই করবেন।’

চিকিৎসক নেতা ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী মহানগর বিএনপির সভাপত্বির দায়িত্বও পালন করেছেন। এবার তিনি আহ্বায়ক হতে পারেন বলে আলোচনা চলছে। ডা. শাহারিয়ার বলেন, ‘এ বিষয়ে কেন্দ্রের দায়িত্বশীল নেতারা সিদ্ধান্ত নেবেন। আগাম কিছু বলা যাবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর