বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাবুনগরীর হাতেই হেফাজত, বাদ শফীপন্থিরা

  •    
  • ১৫ নভেম্বর, ২০২০ ১৪:৪৮

প্রয়াত আমির শফীর ছেলে আনাস মাদানীর অনুসারীরা বলছেন, এই কমিটি বৈধ হয়নি। আগের কমিটির ৫০ জনেরও বেশি নেতা সম্মেলনে দাওয়াত পাননি।

বিভেদের মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলো। প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীর অনুসারীদের বর্জনের মধ্যে সংগঠনের সম্মেলনে নতুন আমির ঘোষণা করা হয়েছে আগের কমিটির মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীকে।

মহাসচিব করা হয়েছে সংগঠনের গত কমিটির ঢাকা মহানগর শাখার আমির নূর হোসাইন কাসেমীকে।

প্রয়াত আমির শফীর ছেলে আনাস মাদানীর অনুসারীরা বলছেন, এই কমিটি বৈধ হয়নি। আগের কমিটির ৫০ জনেরও বেশি নেতা সম্মেলনে দাওয়াত পাননি।

অন্যদিকে হেফাজতের নতুন আমির ঘোষণার পর বাবুনগরী বলেছেন, তাদের কমিটিই বৈধ। যারা বিরোধিতা করছে তাদের কোনো ভিত্তি, জনসম্পৃক্ততা নেই।

আল্লামা শফীর মৃত্যুর প্রায় দুই মাস পর রোববার সকালে চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় নতুন নেতা নির্বাচনে সম্মেলন হয়। সারা দেশ থেকে ৩৭০ জন কওমি আলেম যোগ দেন এতে।

আরও পড়ুন: ভেঙেই যাচ্ছে হেফাজত

 

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আল্লামা শফীর জীবদ্দশায় হেফাজত থেকে পদত্যাগকারী সিনিয়র নায়েবে আমির মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরী।

জোহরের নামাজের পর গণমাধ্যমকর্মীদেরকে মাদ্রাসায় ঢুকতে দেয়া হয় আর সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা করা হয় নতুন নেতা।

একাংশের বর্জনের মধ্য দিয়ে হেফাজতের সম্মেলন শেষে নতুন কমিটির ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা

 

আমির ও মহাসচিবসহ কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা রাখা হয়েছে ১৫১ জন। এতে বাদ পড়েছেন আল্লামা শফীর কমিটির নায়েবে আমির মাওলানা সলিমুল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব মাইনুদ্দীন রুহি, মুফতি ফয়জুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানী।

সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র নায়েবে আমির মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরীকে হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত করা হয়েছে।

কমিটিতে নায়েব আমির রাখা হয়েছে ৩২ জনকে, যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে সাত জনকে, সহকারী মহাসচিব করা হয়েছে ১৮ জনকে।

হেফাজতের নেতৃত্ব নির্বাচনে জাতীয় সম্মেলনে সারাদেশ থেকে আলেমরা যোগ দেন হাটহাজারী মাদ্রাসায়

 

গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় ব্যাপক হাঙ্গামার পর আল্লামা শফী মাদ্রাসা প্রধানের পর ছেড়ে দেন। দুই দিন পর তিনি মারা যান। তার অনুসারীরা অভিযোগ করে, হত্যা করা হয়েছে প্রবীণ এই আলেমকে।

 

তখন থেকেই হেফাজতে দুটি ধারা স্পষ্ট হয়ে উঠে। আর মহাসচিব হিসেবে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে যখন সম্মেলন ডাকেন বাবুনগরী, তখন বিরোধিতা প্রকাশ্যে আসে।

সম্মেলনের আগের দিন চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে আহমেদ শফীর শ্যালক মঈন উদ্দিন, আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাইনুদ্দিন রুহি বলেন, এই সম্মেলন অবৈধ। সেখানে তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। একাংশকে বাদ দিয়ে করা কমিটি গঠনতন্ত্রবিরোধী।

শফীর নেতৃত্বাধীন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ঢাকার লালবাগ মাদ্রাসার মুফতি ফয়জুল্লাহ এক অনুষ্ঠানে বলেন, একতরফা সম্মেলন কোনোভাবে মেনে নেয়া হবে না।

নতুন কমিটি ঘোষণার পর মাইনুদ্দিন রুহি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। বর্তমানে যে কমিটি আছে, তার ৫০ জনের বেশি এই সম্মেলনে দাওয়াত পাননি। তারা আজ বিকালে বসবে এবং এর একটা সিদ্ধান্ত জানাবেন।’ 

হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফী

 

যে সংবাদ সম্মেলনে নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে বাবুনগরীও সংগঠনের মধ্যে বিভেদের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন। জবাবে তিনি বলেন, ‘কাউন্সিল সম্পূর্ণ বৈধ। কারণ, এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ নায়েবে আমির, যুগ্ম মহাসচিবরা উপস্থিত আছেন। আট বিভাগের ৬৪ জেলার আলেমরা উপস্থিত আছেন। তাদের ভোটের মাধ্যমে হেফাজতের নতুন কমিটি ঘোষিত হলো। এটাই হচ্ছে হেফাজতের মূল কমিটি, এর বাইরে হেফাজতের কোনো কিছু নেই। যদি কেউ হেফাজতের নাম ভাঙিয়ে কিছু করতে চায়, সেটা অবৈধ।’

শফীর ছেলে আনাস মাদানীকে সরিয়ে সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া জাকারিয়া নোমান ফয়েজী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়েছে। যারা এই কমিটির বিরোধিতা করছে তারাই অবৈধ।’

নারী নীতির বিরোধিতা করতে গিয়ে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠন করা হয় হেফাজতে ইসলাম। সারাদেশে কওমি আলেমদের মধ্যে মুরুব্বি হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য আল্লামা শফীকে সভাপতি ও জুনাইদ বাবুনগরীকে করা হয় মহাসচিব।

সংগঠনটি তুমুল আলোচিত হয়ে উঠে ২০১৩ সালে।

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের ধর্মদ্রোহী আখ্যা দিয়ে মাঠে নামে তারা।

ওই বছরের ৫ মে ১৩ দফা দাবিতে রাজধানীর শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়ার ঘটনায় ব্যাপক হাঙ্গামা হয়। সেদিন রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নেতাকর্মীদের উচ্ছেদের পর হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে মরদেহ গুম করার অভিযোগ করে সংগঠনটি।

তবে পরে এই অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। এমনকি হেফাজতের পক্ষ থেকে নিহত হিসেবে যাদের নাম দেয়া হয়েছিল তারা পরে ফিরে এসেছেন।

অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও ওই ঘটনার পর থেকে হেফাজতের রাজনৈতিক গুরুত্বও তৈরি হয়।

পরে শাহ আহমদ শফী সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। আর কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্সের সমমান দেয়ার পর সম্মিলিত কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় আহমদ শফীকে।

এ বিভাগের আরো খবর