ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের কাজিরহাটে ছোট ফেনী নদীর রেগুলেটরটি (পানি সরবরাহ, নিয়ন্ত্রণ ও যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত সেতু) নষ্ট হয়ে আছে ১২ বছর ধরে। এর ফলে নদীর দুই দিকের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে গেছে নৌকা। কিন্তু দুই পারের দুই লাখ মানুষের জন্য নৌকা রয়েছে মাত্র একটি।
ছোট ফেনী নদীর এক পাশে ফেনীর সোনাগাজী, আরেক পাশে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। ২০০ মিটার এই নদীপথে নৌকায় প্রতিদিন প্রায় সাত-আট হাজার মানুষ চলাচল করে।
সাধারণ মানুষের দাবি, রেগুলেটর সংস্কার করা না হলেও এ নদীতে একটি সেতু করা হোক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনাগাজী উপজেলার ছোট ফেনী নদীর ওপর নির্মিত কাজীর হাট রেগুলেটরটি ভেঙে পড়ে আছে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে একদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের যেমন সময় নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে।
মাদ্রাসার ছাত্র আবদুর রহমান জানান, প্রতিদিন এই নৌকা পার হতে তাদের ২০ টাকা দিতে হয়।
এক নবজাতকের মা সাদিয়া আক্তার জানান, খুব ঝুঁকি আর ভয়ের মধ্যেও কোলে এক শিশু ও হাতে ধরে অপর শিশুকে নিয়ে নৌকা দিয়ে পার হতে হয়। রেগুলেটর ঠিক থাকলে বা সরকার এখানে একটি সেতু করে দিলে তাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
বাগিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরসাহাভিকারী উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর চরসাহাভিকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাফেজ সামছুল হক নুরানী মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী, ২৪০টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা, মসজিদ, মক্তবের লোকজন এই একটি নৌকা ব্যবহার করে দুই দিকে যাতায়াত করছে।
ভেঙ্গে পড়ে আছে রেগুলেটর। ছবি: নিউজবাংলা
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খায়রুল ইসলাম টিপন জানান, ফেনী জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি লিংক রোড হচ্ছে এটি। রেগুলেটর না থাকার পরও প্রতিদিন মানুষ নৌকা দিয়ে পার হচ্ছে।
রেগুলেটরের এক পাশে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মৌলভী বাজার, কদমতলা বাজার, চরহাজারী বাজার, বসুরহাট বাজার, চৌধুরী হাট বাজার।
অন্য পাশে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার কেরামতিয়া বাজার, কাজীরহাট বাজার, লিঙার বাজার, জমদ্দার বাজার, চান মিয়ার বাজার, ধনিপাড়া বাজার, ইতালি মার্কেট বাজার ও ওলামা বাজার।
স্থানীয় এক জন বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর এলাকা হওয়ার পরও এখানে দুই লাখ মানুষ দীর্ঘ ১২ বছর ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরপার্বতী গ্রামের বাসিন্দা মো. রজিম মিয়া জানান, কাজির হাট এলাকায় তার ব্যবসা। নৌকায় করে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন তার ৭০-৮০ টাকা খরচ হয়। দৈনিক যত টাকা ব্যবসা হয়, তার অর্ধেক নৌকার মালিককে দিয়ে দিতে হয়।
নৌকার ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম জানান, জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়েছেন। সে জন্য প্রতি যাত্রী থেকে ১০ টাকা করে নিতে হয়।
সোনাগাজী উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী নুরুন নবী জানান, আগের রেগুলেরটি আর ঠিক করা হচ্ছে না। নোয়াখালীর মুছাপুরে রেগুলেটরটি স্থাপন করা হয়েছে।