বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বৈবাহিক ধর্ষণ: পাকিস্তানে অপরাধ, বাংলাদেশে নয়

  •    
  • ১৪ নভেম্বর, ২০২০ ১৬:২২

দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় সংশোধন এনে ২০০৬ সালেই পাকিস্তান স্ত্রীকে সঙ্গমে বাধ্য করাকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সেখানে এই অপরাধে ২৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে।

নিজের ইচ্ছার বাইরে যৌন সম্পর্কে বাধ্য হলেও আইনি জটিলতায় সব সময় প্রতিকার পাওয়ার অধিকার নেই নারীদের।

বাংলাদেশের আইনে বিয়ের পর সঙ্গী জোর করলে তাকে ধর্ষণ হিসেবে ধরা যায় না। যদিও পশ্চিমা দুনিয়ার বাইরে বিভিন্ন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশও একে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করেছে।

পাকিস্তানও বিয়ের পর ইচ্ছার বাইরে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করার আইন করেছে। নেপালও একই ধরনের আইন করেছে।

১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ বৈবাহিক ধর্ষণকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে ১৪০টিই সংজ্ঞা পাল্টে বৈবাহিক জীবনে ইচ্ছার বাইরে সঙ্গমকে ধর্ষণ ধরে শাস্তির ব্যবস্থা করেছে।

কিন্তু বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ গণ্য করেনি। ধর্ষণবিরোধী সাম্প্রতিক আন্দোলনের পর এই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন কয়েকজন।

দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় সংশোধন এনে ২০০৬ সালেই পাকিস্তান স্ত্রীকে সঙ্গমে বাধ্য করাকে অপরাধ ধরে শাস্তির বিধান করেছে। সেখানে এই অপরাধে ২৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সে দেশে কেবল একটি মাত্র মামলা হয়েছে।

পাশের দেশ ভারতেও এই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা। যদিও সে দেশের সরকার এখনও আইন সংশোধন করেনি।

গত ১ নভেম্বর একজন নারী সাংবাদিক বৈবাহিক জীবনে ইচ্ছার বাইরে সঙ্গমে বাধ্য করার বিষয়টি ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করতে আইনি নোটিশ পাঠান আইন সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদফতর ও সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালককে।

নোটিশে বলা হয়, দেশের অধিকাংশ বিবাহিত নারী বৈবাহিক ধর্ষণ বিষয়ে সচেতন নন। পুরুষের পাশাপাশি অনেক নারীও মনে করেন স্ত্রী হচ্ছে স্বামী বা পুরুষের সম্পত্তি। পুরুষ বা স্বামীটি হচ্ছে সত্বাধিকারী।

একজন ভুক্তভোগী নারীর কাছে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ ধর্ষণের চাইতেও মারাত্মক ও যন্ত্রণাদায়ক বলেও উল্লেখ আছে নোটিশে। বলা হয়, ‘দেশ অনেক দিক থেকে উন্নতি করেছে। কিন্তু বৈবাহিক ধর্ষণকে এখনও অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে পারছে না।’

তবে সেই নোটিশের কোনো জবাব আসেনি বলে জানিয়েছেন ওই নারী সাংবাদিকের আইনজীবী মো. জাহিদ চৌধুরী জনি। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করব চলতি সপ্তাহের মধ্যে।’

মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা চারটি সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), নারীপক্ষ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক হাইকোর্টে রিট করেছে।

রিটের শুনানি নিয়ে উচ্চ আদালত ধর্ষণের বর্তমান সংজ্ঞা বাতিল করে এই বিষয়টিও কেন অন্তর্ভুক্ত করা হবে না, সেটি জানতে চেয়ে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক সচিব ও পুলিশ প্রধানের কাছে জবাবও চেয়েছে।

নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তারের একান্ত সচিব শাহাদাত হোসেন জানাতে পারেননি রুলের জবাব দেয়া হয়েছে কি না।

ব্লাস্টের আইনজীবী শারমিন আক্তার জানিয়েছেন, হাইকোর্টের রুলের জবাব এখনও আসেনি। তিনি জানান, উচ্চ আদালত চার সপ্তাহ সময় দিয়েছে। এখনও সময় শেষ হয়ে যায়নি।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের সংজ্ঞা হিসেবে বলা আছে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে, বিনা সম্মতিতে, ভয় দেখিয়ে, স্বামী হিসেবে প্রতারণা করে বা যদি বয়স ১৪ এর কম হয় তাহলে মেয়েটির সম্মতি থাকলেও তা ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে।

আইনে ব্যতিক্রম হিসেবে বলা আছে, ‘কোনো পুরুষ কর্তৃক তার স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সহবাসে যদি স্ত্রীর বয়স ১৩ বছরের কম না হয়, তাহলে নারী ধর্ষণ বলে পরিগণিত হবে না।’

আবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ (১) ধারায় বলা আছে, যদি কোনো পুরুষ বিয়ে করা ছাড়া ১৬ বছরের বেশি বয়সের নারীকে ইচ্ছার বাইরে বা ভয় দেখিয়ে বা প্রতারণা করে বা ১৬ বছরের কম কারও সঙ্গে সম্মতি নিয়ে যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তা ধর্ষণ।

এই দুটি ধারা অনুযায়ী বিবাহিত নারীকে তার ইচ্ছার বাইরে সঙ্গমে বাধ্য করা আইনবিরুদ্ধ কাজ নয়।

জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অবশ্যই এই আইন পরিবর্তন হওয়া দরকার।’

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় স্বামীরা নেশা করে এসে স্ত্রীর ওপর প্রতিশোধ নিতে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে মিলন করে। এটা এক ধরনের নির্যাতন, যা কোনো ভাবেই আইনি বৈধতা পেতে পারে না।’

নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা এই আইনজীবী নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, ‘অনেক স্বামী তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে স্ত্রীর অমতে জোরপূর্বক মিলন করে। স্ত্রী যদি অভিযোগ করে সেটিকে আইনে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে তার শাস্তির বিধান করা প্রয়োজন।’

এমনকি একজন যৌন কর্মীও যদি কারো বিরুদ্ধে তার মতের বিরুদ্ধে যৌনমিলনের অভিযোগ আনে, সেটিও আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত।

সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত ও এই বিষয়ে রিটকারী সংগঠন ব্লাস্টের আইনজীবী শারমিন আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাদের প্রণীত আইন অনুযায়ী দেশ পরিচালনায় হয় সেই ব্রিটেন কিন্তু প্রায় ৫০ বছর আগেই ধর্ষণের সংজ্ঞা সংশোধন করে একে ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য করে নিয়েছে। নেপাল, পাকিস্তানও তা করেছে, ভারতও আইনে সংশোধন করে একটা সমতা এনেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও সেটি করা হয়নি। এ কারণেই বিষয়টি নিয়ে আমরা আদালতে গিয়েছি।’

উচ্চ আদালতে মামলার প্রসঙ্গটি টেনে প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইনের দুটি ধারা স্বামী কর্তৃক ধর্ষণের বিচার প্রাপ্তির অধিকার ক্ষুন্ন করে। আদালত শুনানি নিয়ে এ বিষয়ে আদেশ দিয়েছে।

‘আইনগুলো যা বৈষম্যমূলক এবং নারী অধিকার, সমতা, বৈষম্যহীনতা, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালতের কী রায় আসে সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।’

এ বিভাগের আরো খবর