বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রায়হানের নীল শার্ট-মোবাইল উদ্ধারের দাবি মায়ের

  • দেবাশীষ দেবু, সিলেট   
  • ১৪ নভেম্বর, ২০২০ ১৫:৩০

‘আমরাও মনে করি রায়হান হত্যা এবং আকবরের পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে আরও অনেক পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত। রিমান্ডে আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জড়িত অন্যদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার করতে হবে।’

রায়হান আহমদ হত্যা মামলার সব আলামত দ্রুত সংগ্রহ করতে পিবিআই’র প্রতি আহবান জানিয়েছেন নিহতের মা সালমা বেগম। নগরীর আখালিয়া নগরীর নিজ বাসায় শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান তিনি।

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে আনার পর মারা যান রায়হান আহমদ। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই অভিযোগ করা হচ্ছে, নির্যাতন চালিয়ে রায়হানকে হত্যা করা হয়েছে।

এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত পুলিশের বহিষ্কৃত উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূইয়াকে গত ৯ নভেম্বর সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।

এরপর ১০ নভেম্বর তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেন ছেলে রায়হানের মৃত্যুর পর থেকেই বিচারের দাবিতে রাজপথে থাকা সালমা বেগম।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আটক হওয়ার পর আকবর জানিয়েছেন, ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন। আমরাও মনে করি রায়হান হত্যা এবং আকবরের পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে আরও অনেক পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত। রিমান্ডে আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জড়িত অন্যদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার করতে হবে।’

রায়হান হত্যার আলামত সংগ্রহ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১০ অক্টোবর রাতে রায়হানকে ধরে নেয়ার সময় তার পরনে ছিল নীল শার্ট। অথচ পরদিন ১১ অক্টোবর সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকা রায়হানের মরদেহের পরনে ছিল লাল শার্ট। এছাড়া মরদেহ হস্তান্তরের সময় তার মোবাইল ফোনও ফিরিয়ে দেয়নি পুলিশ। রায়হান মারা যাওয়ায় একমাস পরও এর কোনটিই ফিরে দেয়া হয়নি। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারী সংস্থাকে এই আলামতগুলো উদ্ধার করতে হবে। নতুবা এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব হবে না।’

রায়হান হত্যা মামলায় আকবর ছাড়াও আরও তিন পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পিবিআই। ঘটনার দিন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে কর্মরত এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটু চন্দু দাস ও হারুনুর রশীদ রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।

তবে তারা জবানবন্দি না দিলেও এই মামলার সুষ্ঠু বিচারের ক্ষেত্রে তা কোনও প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা জজ কোর্টের সাবেক পিপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।

শনিবার রায়হানের মায়ের সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে তিনি বলেন, পুলিশের তদন্ত কমিটি নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। এখন আসামিরা জবানবন্দি না দিলেও বিচারে কোনও প্রভাব ফেলবে না।

এছাড়া এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর। ঘটনার সময় তিনি বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ ছিলেন। তার নেতৃত্বেই নির্যাতন চালানো হয় বলে সবাই বলেছেন। আটকের পর জনতার কাছে আকবরেও স্বীকার করেছেন পাঁচ থেকে ছয়জন মিলে মারধর করেছেন। ফলে তার জবানবন্দিই এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ।

রায়হান হত্যার বিচারের দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসী মিলে গড়ে তুলেছেন ‘বৃহত্তর আখালিয়া (১২ হামছায়া) সংগ্রাম পরিষদ’ নামে এইটি প্ল্যাটফর্ম। এই পরিষদের আহ্বায়ক ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিসুর রহমান কমরান শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘রায়হান হত্যার তদন্তে কোন অবহেলা হলে বা কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হলে আরো কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।’

গত ১০ অক্টোবর রাতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে নেয়া হয় রায়হান আহমদকে। পরদিন সকালে গুরুতর অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে দাবি করা হয়, ছিনতাইয়ের সময় গণপিটুনে মারা গেছেন রায়হান। তবে তার পরিবার প্রথম থেকেই দাবি করছে ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে মারা গেছেন রায়হান। ১১ অক্টোবর রাতেই রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে থানায় মামলা করেন।

এরপর মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে ওই কমিটি নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে। ওই কমিটি দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন সদস্যকে প্রত্যাহার করে। ঘটনার পরপরই গা ঢাকা দেন এসআই আকবর।

নগরীর আখালিয়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমদ নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।

এ বিভাগের আরো খবর