লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে মসজিদে তর্কাতর্কির জেরে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় আরও এক জনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ধরা পড়া আফাজ উদ্দিন ওই মসজিদের মোয়াজ্জিন বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শুক্রবার ভোরে বুড়িমারী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি বুড়িমারী বাজারে। এ নিয়ে তিনটি মামলায় মোট ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হলো।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর ফারুক। জানিয়েছেন, তাকে আদালতে তোলা হবে।
যদিও মোয়াজ্জিনের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাননি ওসি ডিবি। বলেন, ‘তার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করা হবে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে।’
ঘটনার দিন যখন শহীদুন্নবী ও তার বন্ধুকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যলায়ে নেয়া হয়, তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তখন মোয়াজ্জিনকে বারবার খবর দেয়া হলেও তিনি ঘটনাস্থলে যাননি। এটা ষড়যন্ত্রমূলক বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ২৯ অক্টোবর বিকেলে তর্কাতর্কির পর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ৫০ বছর বয়সী আবু ইউনুছ মো. শহীদুন্নবী জুয়েলকে।
নিহত শহীদুন্নবী জুয়েল
সেদিন মসজিদে তর্কাতর্কির ঘটনার পর শহীদুন্নবী ও তার এক বন্ধুকে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যায় প্রশাসন। ঘটনা স্থিতিম হয়ে যাওয়ার পর সেখানে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ।
‘আল কোরআনের আলো, ঘরে ঘরে জ্বাল’, ‘ইসলামের আলো ঘরে ঘরে জ্বাল’ স্লোগান দিয়ে তারা হামলা করে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। পুলিশের উপস্থিতিতেই শহীদুন্নবীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ টেনে নিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
এই ঘটনায় পুলিশ মামলা করেছে মোট তিনটি। গ্রেফতার হয়েছেন প্রধান আসামি আবুল হোসেনের, মসজিদের খাদেম জোবেদ আলীও। আসামিদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
এই মোটর সাইকেলে চড়ে বুড়িমারী গিয়েছিলেন শহীদুন্নবী জুয়েল
এই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, শহীদুন্নবীর বিরুদ্ধে মসজিদে কোরআন অবমাননার যে অভিযোগ করা হয়েছিল, তার কোনো প্রমাণ মেলেনি। বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর।