ভারতীয় সীমান্তবর্তী শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে এসেছে বন্যহাতির দল। এতে এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পাহাড়িরা মশাল জ্বালিয়ে কাটাচ্ছে নির্ঘুম রাত।
তিনদিন আগে ১৫টি হাতির একটি দল লোকালয়ে নেমে আসে। বুধবার বিকেল নাগাদ হাতির দলটি উপজেলার তাওয়াকুচা এলাকায় ‘সুফল’ প্রকল্প নামে বনবিভাগের একটি বাগানে গিয়ে অবস্থান নেয়।
বন বিভাগ সূত্র ও পাহাড়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে ২০ থেকে ২৫টি হাতির একটি দল ভারত থেকে দলছুট হয়ে শেরপুরের গারো পাহাড়ে চলে আসে।
পরে দলটি আর তাদের পুরোনো আবাসস্থলে ফিরে যেতে পারেনি। বংশবৃদ্ধি হয়ে বর্তমানে হাতির সংখ্যা ৮০ টির মতো হয়েছে।
তারা এখন খাবারের সন্ধানে গারো পাহাড়ের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে চষে বেড়ায়। পাহাড়িরা কোনো ফসল ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারে না।
ধান ও কাঁঠাল পাকার সময় হাতির আক্রমণ বেড়ে যায়। হাতির আক্রমণে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ।কাঠ-খড়ি সংগ্রহের পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহের জন্য পাহাড়ের ঢালে প্রতি বছর পাহাড়িরা ধান চাষ করে থাকে। এই ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত পাহাড়িরা গ্রামে গ্রামে ২০-৩০ জনের দলে বিভক্ত হয়ে পাহারা বসায়।
এ সময় তারা বাঁশের মাথায় কাপড় বেঁধে কেরোসিন দিয়ে মশাল জ্বালিয়ে রাখে। আর এভাবে নির্ঘুম রাত কাটায় ।
স্থানীয় বাসিন্দা পনির হোসেন বলেন, হাতির দল দেখতে এ এলাকার চারদিকে শত শত মানুষ ভিড় জমিয়েছে। ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে তার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে প্রায় প্রতি রাতেই হানা দিচ্ছে বন্য হাতির দল।
ক্ষেতের পাকা ধান খেয়ে দুমড়ে-মুচড়ে সাবাড় করে দিচ্ছে। ফলে এলাকার কৃষকদের চোখে এখন ঘুম নেই। রাত কাটছে হাতি আতঙ্কে।
এ ব্যাপারে বনবিভাগের তাওয়াকুচা বিট কর্মকর্তা মো. মোখরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, গারো পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় বন্যহাতি নেমে এসেছে। এতে এলাকাগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
হাতির পাল মানুষের বসতবাড়িতে হামলা না চালালেও ধান ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি করছে। তাওয়াকুচা বিটের ‘সুফল’ প্রকল্পের প্রায় ৭ হাজার চাপালিশ চারা নষ্ট করেছে বন্য হাতির দল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, দুর্ঘটনা এড়াতে হাতির দলকে নিরাপদে পাহাড়ে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।