শীত নামছে। শান্ত হয়ে আসছে বঙ্গোপসাগর। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে যাওয়ার এই তো উপযুক্ত সময়। ১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এ দ্বীপে পর্যটক যাওয়া শুরু হয়েছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম।
কক্সবাজার থেকে একটিমাত্র জাহাজ চলাচল করছে সেন্টমার্টিনে। সেটিও একমাত্র বেহাল জেটিতে ভিড়তে পারে না। একটু দূরে, সাগরে নোঙর করছে। এরপর নৌকায় করে পর্যটকদের নেওয়া হয় জেটিতে। এতে পর্যটকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
জেটিটি সংস্কার না করায় টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলচাল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে অন্য বছরের তুলনায় প্রতিদিন ১০ ভাগের এক ভাগ পর্যটক যাচ্ছে সেখানে।
জাহাজে টেকনাফ কিংবা কক্সবাজার থেকে কয়েক ঘণ্টার ভ্রমণ। এরপর গাঢ় নীল পানিতে ঘেরা সেন্টমার্টিন দ্বীপ। এটি টেকনাফ উপজেলার একটি ইউনিয়ন। আয়তন প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার। সেখানে ছোট-বড় ১০০টি আবাসিক হোটেল, বাড়িঘর, কটেজ ও রেস্তোরাঁ, প্রায় ২০০টি দোকান, ২০০টি ভ্যান ও রিকশা এবং ২৫ টি সার্ভিস বোট আছে। এই দ্বীপে প্রায় ১২ হাজার মানুষের বাস। তাদের প্রধান জীবিকা মাছ ধরা। তবে পর্যটক মৌসুমে তাদের বাড়তি উপার্জন হয়। এজন্য তারা পর্যটকের প্রতীক্ষায় থাকেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ২০০৪ সালে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক জেটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সংস্কারের অভাবে এতদিনে জেটির রেলিংয়ের পূর্ব পাশের পার্কিং ও গাইড ভিম এবং স্প্রিং ভিম সাগরের বুকে চলে গেছে। জেটির নিচে বেশির ভাগ পলেস্তারা খসে পড়েছে। রড বেরিয়ে এসেছে। এ কারণে জেটিতে জাহাজ ভিড়তে পারছে না। এবার তাই পর্যটকের সংখ্যা ভয়াবহ রকমের কমে যাবে। তাদের বাড়তি আয়রোজগারও হবে না।
কক্সবাজার থেকে বিলাসবহুল এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস জাহাজ প্রতিদিন প্রায় ১২ শ পর্যটক নিয়ে যাচ্ছে সেন্টমার্টিনে। অন্য বছর এ সময় প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি পর্যটক যেতেন।
সেন্টমার্টিন হোটেল সী-প্রবাল-এর পরিচালক আবদুল মালেক জানান, জেটিটির গাইড ভিম ভেঙে গেছে। বোট সেখানে ভিড়তে পারে না। বিকল্প ব্যবস্থায় যাত্রী ওঠা-নামা করে। পর্যটকদের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। জেটিটি শিগগির সংস্কার করা দরকার।
কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজের কর্মকর্তা একেএম আনোয়ার হোসেন বলেন, পর্যটকদের নির্বিঘ্নে ওঠা-নামা করতে নতুন জেটি নির্মাণের বিকল্প নেই। যত দ্রুত তা করা হবে, ততই মঙ্গল হবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব খাঁন নিউজবাংলাকে জানান, এই দ্বীপে প্রায় ১০ হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তারা পর্যটকদের বরণ করতে সদা প্রস্তুত। অপূর্ব সুন্দর স্থান এই সেন্টমার্টিন দ্বীপ। চার দিকে সাগরের স্বচ্ছ নীল পানি। দ্বীপের মানুষগুলো অসম্ভব ভালো। এখানে চুরি ডাকাতির কোনো রেকর্ড নেই। পর্যটকেরা সারা রাত সৈকতে থাকলেও কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু যেখান দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসেন, সেই জেটি এখনো ভাঙা, সংস্কার করা হয়নি।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটক মৌসুম। প্রতিবছর এ সময় সাধারণত দেশি-বিদেশি কয়েক লাখ পর্যটক আসেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু এই দ্বীপের অবকাঠামোর উন্নয়ন দরকার। বিশেষ করে জেটিটি জরুরি সংস্কার করে জাহাজ ভেড়ার ব্যবস্থা করা দরকার।
জেটিটি সংস্কারে প্রশাসন চেষ্টা চালাচ্ছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন গত সপ্তাহে জাহাজ মালিক ও দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত জেটিটি সংস্কারের বিষয়ে তাগাদা দেন। এ সময় জাহাজ মালিকদের প্রতিনিধিরা জেলা পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে সবার সহযোগিতায় জেটিটি সংস্কারের আশ্বাস দেন।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, জেটি সংস্কারের পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচলের অনুমতির বিষয়ে চিন্তা করা হবে।
তবে এখনও জেটিটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন পর্যটকেরা।