বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আর কুনু মার বুক যেন খালি না অয়’

  • দেবাশীষ দেবু, সিলেট   
  • ১১ নভেম্বর, ২০২০ ২১:৩০

রায়হানের মা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেবল ১০ হাজার টাকার জন্য আমার বড় ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। এই হত্যার পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে। সুষ্ঠ তদন্ত হলে সেই কারণ বেরিয়ে আসবে।’

‘আমি চাই আমার পুয়ার মতো আর কেউরে যেন ইলা বিনা বিচারে মরতে না অয়। আর কুনু মার বুক যেন খালি না অয়। দুষ করলে আইন আছে। আইন অনুযায়ী শাস্তি অইবো। পুলিশে পিটাইয়া মারিলাইতো কেনে?’

এই হাহাকার সন্তানহারা মা সালমা বেগমের।

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে গত ১০ অক্টোবর ধরে এনে নির্যাতন চালানো হয় রায়হানকে। ১১ অক্টোবর সকালে মারা যান তিনি।

হত্যার বিচার দাবিতে সিলেটজুড়ে আন্দোলনে যোগ দেয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। সারা দেশেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় ঘটনাটি।

 

আরও পড়ুন: ফাঁড়িতে মৃত্যু: অনশনে রায়হানের মা

 

রায়হানের মৃত্যুর এক মাস পূর্ণ হয়েছে বুধবার। এর মাত্র দুদিন আগে আটক হয়েছেন প্রধান অভিযুক্ত পুলিশের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূইয়া।

সিলেটের আখালিয়া এলাকায় থাকেন সালমা বেগম। বুধবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, আকবর গ্রেপ্তার হওয়ায় তারা খুশি। কিন্তু এ ঘটনায় কেবল আকবর নয়, পুলিশের আরও অনেকে জড়িত। তাদেরও বিচার করতে হবে।

 

আরও পড়ুন: ভারতে পালাতে গিয়ে ধরা এসআই আকবর

মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।  সালমা বেগমের দাবি, তারা (পিবিআই) পুলিশেরই অংশ হওয়ায় তাদের পক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করা সম্ভব নয়। এজন্য ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান তিনি।

১১ অক্টোবর সকালে রায়হানের মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ছিনতাই করতে গিয়ে গণপিটুনিতে মারা গেছেন রায়হান। তবে ওইদিনই এই মৃত্যুকে হত্যা দাবি করে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানায় পরিবার।

ঘটনার দিন রায়হানের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়, ১১ অক্টোবর ভোরে একটি অপরিচিত ফোন নম্বর থেকে মায়ের মোবাইলে ফোন দেন রায়হান। তিনি দ্রুত ১০ হাজার টাকা নিয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আসতে মাকে অনুরোধ করেন। তবে সকালে রায়হানের চাচা টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে গেলেও রায়হানের দেখা পাননি। পরে ওসমানী হাসপাতালের মর্গে গিয়ে রায়হানের লাশ দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা।

 

আরও পড়ুন: আকবরকে পুলিশ সহায়তা করলে ব্যবস্থা: এসপি

রায়হানের মা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেবল ১০ হাজার টাকার জন্য আমার বড় ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। এই হত্যার পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে। সুষ্ঠ তদন্ত হলে সেই কারণ বেরিয়ে আসবে।’

সেই ফাঁড়ির সামনে আলোক প্রজ্বলন

রায়হান আহমদ হত্যার এক মাস পূর্তির দিনে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামনে আলোক প্রজ্বালন করেছে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’। ১১ অক্টোবর এই ফাঁড়িতেই নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় আলোক প্রজ্বালনের আগে বক্তারা বলেন, পুলিশকে কলঙ্কমুক্ত ও জনবান্ধব করতে হলে অভিযুক্ত চক্রের মূল উৎপাটন করতে হবে। এজন্য এসআই আকবরকে পালানোর পরামর্শ দেয়া ‘সিনিয়র অফিসারদের’ চিহ্নিত করার দাবি জানান তারা।

রায়হানের ছোটভাই রাব্বি আহমদ তানভির বলেন, ‘এসআই আকবরকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও সিম এখনও উদ্ধার হয়নি। এগুলো উদ্ধার করা গেলে আকবর পালানোর আগে কাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, কাদের পরামর্শ নিয়েছেন তা বেরিয়ে আসবে। ’

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ওয়ার্কাস পার্টির জেলা সভাপতি সিকন্দর আলী, আদিবাসী নেতা গৌরাঙ্গ পাত্র, প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী এডভোকেট মহিতোষ দেব মলয়, সমাজকর্মী নিগাত সাদিয়া, আয়োজক সংগঠন দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র সংগঠক আব্দুল করিম কীম, আশরাফুল কবির, রাজীব রাসেল প্রমুখ।

রায়হানের মৃত্যুর ২৮ দিন পর সোমবার সকালে কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত থেকে এসআই আকবরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন সাত দিনের রিমান্ডে আছেন। এর আগে এ ঘটনায় এসআই আশেক-ই এলাহি, কনস্টেবল টিুট চন্দ্র দাশ ও হারুনুর রশীদকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

 

এ বিভাগের আরো খবর