বন্যপ্রাণী পাচার বা হত্যাসহ বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধের পাঁচ ধরনের তথ্য প্রদানকারীকে সর্বনিম্ন আট হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। তথ্য প্রদানকারী না চাইলে তার পরিচয়ও রাখা হবে গোপন।
বন্যপ্রাণী রক্ষায় ‘বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ উদঘাটনে (তথ্য প্রদানকারী) পুরস্কার প্রদান বিধিমালা, ২০২০’ জারি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। খুব শিগগিরই এটি কার্যকর হবে।
বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন অধিদফতরের বন সংরক্ষক মেহেদী কুমার গো।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে এটি জারি করা হয়েছে। আমাদের হাতে এখনো এসে পৌঁছায়নি। তবে শিগগিরই আমরা এই কার্যক্রম শুরু করব।’
কোন প্রাণীর তথ্যে কী পুরস্কার
বিধিমালা অনুযায়ী, পাঁচ ধরনের বন্যপ্রাণীর ক্ষেত্রে দুই শ্রেণির তথ্য দিয়ে পুরস্কার জেতা যাবে।
অপরাধে জড়িত ব্যক্তি বা বন্যপ্রাণীসহ কোনো ব্যক্তি বনাঞ্চলের ভেতর ও বাইরে প্রাণী ধরার ক্ষেত্রে তথ্য দিলে পুরস্কার পাওয়া যাবে। অপরদিকে বাঘ, কুমির বা হাতি, হরিণ, কচ্ছপ বা সাপ এবং পাখি বা অন্যান্য বন্যপ্রাণীর বিষয়ে তথ্যের ওপর পুরস্কার দেয়া হবে।
বাঘের ক্ষেত্রে অপরাধে জড়িত ব্যক্তি বা বাঘসহ কোনো ব্যক্তিকে বনাঞ্চলের ভেতরে প্রাণী ধরার ক্ষেত্রে তথ্যের জন্য ৫০ হাজার টাকা দেয়া হবে। বনাঞ্চলের বাইরের তথ্যের জন্য ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার পাবেন তথ্য প্রদানকারী।
কুমির ও হাতির ক্ষেত্রে আসামি ও প্রাণীসহ বনাঞ্চলের অভ্যন্তরে তথ্যের জন্য ৩০ হাজার টাকা, আসামি ও প্রাণীসহ বনাঞ্চলের বাইরের তথ্যের জন্য ১৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
হরিণের ক্ষেত্রে বনের ভেতর অপরাধ উদঘাটনের তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা এবং বনের বাইরে ১০ হাজার টাকা দেয়া হবে। কচ্ছপ বা সাপের তথ্য দিলে দুটি ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১৫ হাজার টাকা ও ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পাখি ও অন্য বন্যপ্রাণীর ক্ষেত্রে বনের ভেতরে অপরাধ উদঘাটনের তথ্য দিয়ে ১০ হাজার টাকা ও বনের বাইরে তথ্যের জন্য আট হাজার টাকা মিলবে।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই পুরস্কারের মাধ্যমে যে কার্যক্রম হতে যাচ্ছে, তাতে আমাদের কাজ আরও দ্রুত হবে।’
পুরস্কারের জন্য কমিটি
বিধিমালায় বলা হয়, পুরস্কার দিতে প্রধান বন সংরক্ষকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি আর্থিক পুরস্কারের জন্য প্রস্তুত করা তালিকা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে। আর্থিক পুরস্কারের পরিমাণও নির্ধারণ করে দেবে এ কমিটি।
অপরাধ উদঘাটনে তথ্য অনুসন্ধান চলাকালীন বা পরবর্তী সময়ে তথ্য প্রদানকারীর পরিচয়সহ সব তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখবেন বন কর্মকর্তা।
কোনো তথ্য প্রদানকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ উদঘাটন করা সম্ভব হলে তথ্য প্রদানকারীকে আর্থিক পুরস্কার দেয়া যাবে।
অপরাধ উদঘাটন করা সম্ভব না হলেও পরে আলামতসহ অপরাধ উদঘাটন বা অপরাধীকে শনাক্ত ও আটক করা হলে তথ্য প্রদানকারীকে আর্থিক পুরস্কারের জন্য বিবেচনায় আনা যাবে।
অপরাধ সংঘটনকারীকে শনাক্ত করা না গেলে, আটক বা হাতেনাতে ধরা সম্ভব না হলেও তথ্য প্রদানকারী পুরস্কার পাবেন। এ ছাড়া অপরাধী শনাক্ত হওয়ার পরও বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা সম্ভব না হলে তথ্যদাতা পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবেন।
আর্থিক পুরস্কারের অর্থ সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বা ওয়ার্ডেন বা অতিরিক্ত প্রধান ওয়ার্ডেন বা বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের মাধ্যমে তথ্য প্রদানকারীকে সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যে দেবেন। তবে কোনো তথ্য প্রদানকারী যদি জীবনের ঝুঁকির ভয়ে নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চান, তবে তথ্য প্রদানকারীকে একটি পরিচিতি সংখ্যা আইসিএন দিয়ে শনাক্ত করতে হবে। পরবর্তী সময়ে সব যোগাযোগ আইসিএন অনুযায়ী করতে হবে।
বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধের তথ্য আগে প্রকাশিত হলে, কোনো তথ্য বেনামে দেয়া হলে, তথ্য প্রদানকারী নিজেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে এবং অন্য কোনো বৈধ কারণ থাকলে তথ্য প্রদানকারী আর্থিক পুরস্কারের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবে।