শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কাজিরহাট বাজারের এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসায়ী হিমেল আহমেদ অপি। ব্যবসা ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন তিনি।
কয়েক মাসে আগে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং কার্ড পেয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন শরীয়তপুরের বিআরটিএ অফিসে। তবে নির্ধারিত দিনে পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখেন তালিকায় তার নাম নেই।
পরে যোগাযোগ করেন অফিসের কর্মচারী নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানিয়ে দেন, ‘টাকা না দিলে লাইসেন্স মিলবে না। যদি অফিস খরচ দেয়া হয়, তাহলে পরীক্ষায় উপস্থিত থাকলেই হবে; পাস-ফেল ব্যাপার না।’
শেষ পর্যন্ত আট হাজার টাকার মৌখিক চুক্তি করে এক হাজার টাকা দেন হিমেল। বাকি টাকা বিকাশ বা জাজিরার একটি ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অফিস থেকে বের হন তিনি।
পুরো ঘটনাটিই হিমেলের সঙ্গে থাকা এক ব্যক্তি ক্যামেরায় ধারণ করেন।
হিমেল নিউজবাংলাকে বলেন, নজরুল অফিস সহকারী হিসেবে পরিচয় দেন। তাই লাইসেন্স পেতে তাকে টাকা দেন।
নজরুল তাকে জানান, ওই টাকার মধ্যে তিন হাজার ২০০ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে আর বাকিটা অফিস খরচ।
এ নিয়ে কথা বলতে মাস্টাররোলের কর্মচারী নজরুল ইসলামের অফিস কক্ষে ঢুকতেই তিনি বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অফিসের মধ্যে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এক পর্যায়ে ক্ষমাও চান। তবে ক্যামেরার সামনে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
সেবা নিতে আসা ব্যক্তিরা বললেন, শরীয়তপুরের বিআরটিএ অফিসে ঘুষ লেনদেনের এমন চিত্র প্রতিদিনকার। ঘুষ না দিলে এখানে রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, রুট পারমিট, মালিকানা বদল, গাড়ির ফিটনেসসহ কোনো সেবাই মেলে না।
অফিসের মধ্যে প্রকাশ্যেই চলে নগদ লেনদেন। যারা টাকা দেন, তারা লাইসেন্স পান; অন্যরা পরীক্ষায় পাসই করেন না।
প্রতিটি মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের সময় সরকারি ফি ছাড়াও অতিরিক্ত তিন থেকে ছয় হাজার টাকা হাতিয়ে নেন এ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর পেছনে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করে বলে অভিযোগ সেবাগ্রহীতাদের।
চুক্তিভিত্তিক ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে অবস্থা আর খারাপ। চুক্তি মোতাবেক টাকা দিয়ে শুধু পরীক্ষায় উপস্থিত হলেই পাস করিয়ে দেয়া হয়।
রাশেদুল ইসলাম রিয়াদ নামের একজন গ্রাহক জানান, টাকা না দিলে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একবার মাদারীপুর অফিস আবার শরীয়তপুর অফিসে ঘুরতে হয়।
রিয়াদ জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে সরকারনির্ধারিত অর্থের দ্বিগুণ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু এক বছর হয়ে গেলেও কোনো খবর নেই। বলেন, ‘আবার গেলে নতুন করে কত টাকা ঘুষ দাবি করে সেটাই দেখার বাকি।’
এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি আইনজীবী মুরাদ হোসেন মুন্সী বলেন, ‘টাকা নিয়ে আনফিট গাড়িকে ফিট আর অপ্রশিক্ষিত চালককে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া সড়ক দুর্ঘটনা বড় কারণ। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এসব অনিয়ম আর দুর্নীতি রোধ এখন সময়ের দাবি।’
শরীয়তপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) জি এম নাদির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অফিসের মধ্যে নগদ টাকা লেনদেনের কোনো নিয়ম নাই। ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হয়। কেউ যদি অফিসের মধ্যে অর্থ লেনদেন করে থাকে, তা সম্পূর্ণ অবৈধ।’
তিনি আরও বলেন, ‘নজরুলের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পেয়ে তাকে অফিস থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। কীভাবে সে আবার অফিসে কাজ করছে, খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’