বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রকল্পের কাজ না করেই ‘২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ’

  •    
  • ১১ নভেম্বর, ২০২০ ১০:৩৪

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। কাগজে-কলমে সামাজিক ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের নানা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন দেখানো হলেও বাস্তবে কিছুই করা হয়নি।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তার বিরুদ্ধে প্রায় ২৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে সামাজিক ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ না করেই প্রায় ২২ লাখ টাকা এবং জন্মনিবন্ধন ফির প্রায় ৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

নিজস্ব অনুসন্ধান ও নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, গুনাইগাছ ইউনিয়নের কাজিরচক এলাকায় একটি ইউড্রেন নির্মাণের জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পে কাজিরচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে কয়ছারের বাড়ি সংলগ্ন ইউড্রেন নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি। অথচ কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে প্রকল্পের টাকা তুলে নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।

চেয়ারম্যানের চাচাত ভাই বুলু বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যানের কাছে শুনেছিলাম, এখানে একটি ইউড্রেন হবে। কিন্তু জমিওয়ালা জমি না দেয়ায় আর হয়নি। কিন্তু টাকা কী করছে, আমরা জানি না।’

কাগজপত্র অনুযায়ী, একই অর্থবছরে কাঁঠালবাড়ি মৌজার কামালের বাড়ি থেকে দুর্গা মন্দির হয়ে গফুরের বাড়িগামী রাস্তায় ১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ইউড্রেন নির্মিত হয়েছে। রামধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ষষ্ঠীর বাড়িগামী রাস্তায় রতনের বাড়ির সামনে ১ লাখ টাকায় ব্যয়ে আরেকটি ইউড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে সেই ইউড্রেনগুলোর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অথচ কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে প্রকল্পের পুরো টাকা তুলে নিয়েছেন চেয়ারম্যান।

এই এলাকার বাসিন্দা পরিমল চন্দ্র বলেন, ইউপিতে কখন কিসের বরাদ্দ আসে, তার কোনো সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড না থাকায় তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।

একই অর্থ বছরে গুনাইগাছ ইউনিয়ন তথ্য সেবার বিলবোর্ড, ব্যানার ও আসবাবপত্র ক্রয়ে ৫১ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়।

তবে তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা এরশাদুল হক বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না। আমার কেন্দ্রে যেসব আসবাব দেখছেন, সেগুলো আমার কেনা। চেয়ারম্যান ও সচিবকে বলেছিলাম আসবাবপত্র কিনে দিতে, তারা দেই দেই করে আজও দেননি। বিল কীভাবে উত্তোলন করেছেন, আমার জানা নেই।’

২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এসজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় বিবিজি ১ম, ২য় এবং পিবিজির বরাদ্দের মধ্যে রফিক মাস্টারের পুকুর পার প্যালাসাইটিং করার জন্য ৭০ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়। কাজ না করেও কাগজে-কলমে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে টাকা তোলা হয়েছে।

রফিক মাস্টার বলেন, ‘আমার পুকুরে কোনো প্রকল্পের কাজ হয়নি। অথচ তারা কীভাবে বিল তুলছেন, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন।’

ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩ জন দুস্থ পরিবারের জন্য দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে গোড়াবাঁধা টিউবওয়েল দেয়ার কথা। তবে সুবিধাভোগীরা বলেন, তারা নিজেদের টাকায় গোড়া বাঁধাই করেছেন।

উপকারভোগী রেজিয়া বেগম বলেন, তিনি বিনা মূল্যে একটি টিউবওয়েল পেয়েছেন। পরে নিজের টাকা খরচ করে টিউবওয়েলের গোড়া পাকা করেছেন।

দুস্থ পরিবারের জন্য দেয়া সুবিধা ইউপি সদস্য নিজেই তার বাড়িতে স্থাপন করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য গোলাম বারি বলেন, তার নিজেরই চলার মতো অবস্থা নেই। তাই চেয়ারম্যানকে বলে তার স্ত্রীর নামে লেট্রিন ও টিউবওয়েল নিয়েছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ভূমি হস্তান্তর প্রকল্পে ইউপি ভবনের মেরামত ও রংকরণে দুই লাখ টাকা উত্তোলন করা হলেও কাজ হয়নি। রজবল্লভ ক্লিনিক থেকে কাজিরচকগামী রাস্তায় কাঠের সাঁকোর জন্য দুই লাখ বরাদ্দ হলেও এখানে কাজ হয়নি। এডিপি প্রকল্পে কেবলকৃষ্ণ মৌজায় সাবেক আউয়াল চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে শুকদেব রাস্তায় দুই লাখ টাকায় একটি ইউড্রেন নির্মাণ দেখানো হলেও তা হয়নি। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় শিশির মাস্টারের বাড়ির সামনে এক লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ইউড্রেন নির্মাণ দেখানো হলেও, বাস্তরে এর অস্তিত্ব নেই। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে টিআর-২য় পর্যায় নাগড়াকুড়া দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় দেড় লাখ টাকার বেঞ্চ দেয়ার পরিবর্তে সেখানে মাত্র ১০টি দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৭৩৩ জনের জন্মনিবন্ধন ফি বাবদ পরিষদে জমা হয় ৫ লাখ ১৮ হাজার ১৭১ টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকে জমা হয় ১ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ টাকা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গুনাইগাছ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ নিউজবাংলাকে বলেন, কাজ না করে কোনো অর্থ তোলা হয়নি। সব কাজ সঠিকভাবে হয়েছে।

এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি সিরিভ হয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর