বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাইন্ড এইডে সাউন্ড প্রুফ রুমে চলে নির্যাতন

  •    
  • ১০ নভেম্বর, ২০২০ ২৩:৩১

রাজধানীতে একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি এক পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর পর জানা গেছে, ওই হাসপাতালে একটি শব্দ নিরোধক কক্ষে রোগীদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো। মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎকেরা বলছেন, নির্যাতন বা মারধর কোনো চিকিৎসার অংশ হতে পারে না।

রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড নামে একটি বেসরকারি মানসিক হাসপাতালে ভর্তির পরপরই প্রাণ হারিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার আনিসুল করিম। হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, হাসপাতালের কর্মীরা তাকে মারধর করছেন। 

তাকে ‘শান্ত’ করার নামে হাসাপাতালের সাউন্ড প্রুফ কক্ষে নিয়ে যারা মারধর করেছেন তাদের কেউই এ ধরনের রোগীদের নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষিত ছিলেন না। মার্কেটিং ম্যানেজার, কিচেন স্টাফ, ওয়ার্ড বয় হিসেবে মাইন্ড এইড হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন তারা। পুলিশের এই কর্মকর্তার মতো অন্য রোগীদের ক্ষেত্রেও শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে এই মানসিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

ভুল পদ্ধতিতে মানসিক চিকিৎসা

নিয়মিত মারধর ও ভুল পদ্ধতিতে অনেক বেসরকারি হাসপাতালে মানসিক রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাইক্রিয়াট্রিক সোস্যাল ওয়ার্কার মকবুল হোসেন পাশা নিউজবাংলাকে বলেন, একজন মানসিক রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার প্রথম শর্ত হলো, ওই রোগীর অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আলো বাতাসসমৃদ্ধ খোলামেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পরিবেশে তাকে রাখতে হবে।

একজন বিশেষজ্ঞ মানসিক চিকিৎসক দিয়ে তার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞ নার্স থাকতে হবে। একটা বোর্ড গঠন করে তার সমস্যা চিহ্নিত করে চিকিৎসা দিতে হবে। মানসিক সমস্যা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। রোগী কী ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত প্রথমে তা বের করতে হবে।

সেবার নামে মাইন্ড এইডে চলে নির্যাতন

যত্রতত্র গড়ে ওঠা লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মানসিক চিকিৎসা দেয়ার স্বীকৃত কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। অভিযোগ রয়েছে, অনেকগুলোতে দিনের পর দিন চিকিৎসা দেয়ার নামে রোগীদের উপর চালানো হয় নির্যাতন।

 

দেশে করোনা সংক্রমণের আগে আদাবরের বায়তুল আমান হাউজিংয়ের ২ নম্বর সড়কে ২৮১ নম্বর বাড়িটি কয়েকটি পরিবারকে ভাড়া দেয়া ছিল। তারা ছেড়ে দেয়ার পর জুলাই মাসে বাড়িটি মাইন্ড এইড সাইক্রিয়েট্রি অ্যান্ড ডি-এডিকশন হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হয়। হাসপাতালের পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদসহ ৫-৬ মিলে এই হাসপাতালটি গড়ে তুলেছেন বলে জানা গেছে।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার আনিসুল করিম কিছুদিন ধরে চুপচাপ থাকায় পরিবারের সদস্যরা গত সোমবার সকালে তাকে প্রথমে রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভালো চিকিৎসার নিশ্চিয়তা না পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তির জন্য তাকে নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন তার ভাই রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আশপাশের হাসপাতালগুলোর মধ্যে মাইন্ড এইডে ভালো চিকিৎসা হয়। একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা রোগীদের নিয়মিত তদারকি করা হয়- এমন তথ্য পেয়েই আমরা সেখানে যাই। আমরা ওখানে ডা. নুসরাত ফারজানার অধীনে ভর্তির ব্যবস্থা করছিলাম। কিন্তু এরই মধ্যে আমার ভাইকে নির্যাতন করে মেরে ফেলল ওরা।'

 

আনিসুল করিম মৃত্যুর ঘটনায় আদাবর থানায় হত্যা মামলা করেছেন তার বাবা ফাইজুদ্দীন আহম্মেদ। মামলায় ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে হাসপাতালটি পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

নির্যাতনের জন্য বিশেষ কক্ষ?

মঙ্গলবার সকালে মাইন্ড এইড হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ভবনের দ্বিতীয় তলায় সিঁড়িতে উঠে ডান পাশে রয়েছে একটি ছোট কক্ষ। কক্ষটি শব্দ নিরোধক (সাউন্ড প্রুফ) করে বানানো। দেয়ালে লাগানো রয়েছে ফোম, যাতে রোগীর নির্যাতনের শব্দ বাইরে না যায়। কক্ষটিতে নেই কোনো জানালা। রয়েছে শুধু একটি দরজা। কক্ষের ভেতরে বসানো রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এই সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকে নির্যাতনের চিত্র।

সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, সোমবারা বেলা ১২টার দিকে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী আনিসুলকে জোর করে ওই কক্ষে ঢোকাচ্ছেন। সেখানে ছয়জন তাকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেছেন। আরও দুই জন তার পা চেপে ধরেছেন এবং মাথার দিকে থাকা দুই জন কনুই দিয়ে তাকে আঘাত করছেন।

ওই কক্ষে অপ্রশিক্ষিত এই কর্মচারীদের নির্যাতনে আনিসুল করিমের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনাকে সুস্পষ্ট হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ।

তিনি সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘…ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় আমাদের কাছে স্পষ্ট মনে হয়েছে, এটা একটা হত্যাকাণ্ড।’

আনিসুল করিমকে শান্ত করার জন্য ওই কক্ষে নেয়া হয় বলে দাবি করেছেন মাইন্ড এইড হাসপাতালের সমন্বয়ক ইমরান খান। তিনি বলেন, আনিসুলকে জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট থেকে তাদের হাসপাতালে নেয়ার পরপরই তিনি উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করেন। তাকে শান্ত করতেই কক্ষটিতে নেয়া হয়।

সিসিটিভি ফুটেজের মারধর করতে দেখা যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইমরান খান জানান, তখন তিনি হাসপাতালে ছিলেন না।

 

শান্ত করার নামে মাইন্ড এইড হাসাপাতালে অন্য রোগীদেরও বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন করা হয় বলে জানিয়েছেন এক রোগীর অভিভাবক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, গত ২০ দিন আগে তিনি ছেলেকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। এই হাসপাতালে যারা ভর্তি হয়, তাদের কোনো না কোনো সময় এই সাউন্ড প্রুফ রুমে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। তার ছেলেও নির্যাতনের শিকার।

এ বিভাগের আরো খবর