জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আইসিইউয়ের জন্য আটটি অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর (এআরভি) কেনার ১২ বছরেও তা স্থাপন না করায় চরম ক্ষোভ জানিয়েছে হাইকোর্ট।
আদালত বলেছে, হাসপাতালটির চরম অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কর্তব্যে অবহেলা শুধু দুঃখজনকই নয়, তা নিন্দনীয় ও উদ্বেগের বিষয়।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ মন্তব্য করে।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নিয়ে একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জারি করা রুল নিষ্পত্তির সময় এ মন্তব্য করে হাইকোর্ট।
আদালত ডা. এএমএম শরিফুল আলম ও ডা. মোল্লা ওবায়দুল্লাহর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে।
আদেশে বলা হয়, পিআরএলজনিত কারণে দুজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয় বলে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য প্রতীকী ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ লাখ টাকা করে আদায়ের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেয়া হলো।
ক্ষতিপূরণের অর্থ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের উন্নয়ন তহবিলে জমা দেয়ার নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্ট। ক্ষতিপূরণ প্রদানে ব্যর্থ হলে পিডিআর আইনের বিধান অনুযায়ী ওই টাকা আদায় করতে হবে।
এছাড়া, ডা. মোয়াররফ হোসেনের অবসরকালীন সুবিধা স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
কারণ হিসেবে হাইকোর্ট বলেছে, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে ভেন্টিলেটরগুলো সচলের অনুরোধ জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন ডা. মোয়াররফ। তবে ন্যাশনাল ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইক্যুপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়াকশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) কর্তৃপক্ষ সচলের দুটি চিঠি পায়নি বলে তদন্তে বলা হয়েছে।
এ অবস্থায় রায় পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি করে ১৫ কার্যদিবসের তদন্ত শেষ করতে বলা হয়েছে। মোয়াররফের দাবি সঠিক না হলে তাকেও পাঁচ লাখ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর দাবি সঠিক হলে নিমিউ অ্যান্ড টিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাইয়ুম (যুগ্ম সচিব, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) এবং মো. রেজানুর রহমানের (যুগ্ম সচিব) কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।
এছাড়া ডা. মানস কুমার বসুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
হাইকোর্ট বলেছে, রাষ্ট্রীয় অর্থ যথাযথভাবে ব্যয়ের লক্ষ্যে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য দেশের সব সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণে কয়েকটি নিয়মনীতি ঠিক করে দিয়ে তা অনুসরণ করতে হবে।
পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি, অনিয়মরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনের ২৫ দফা সুপারিশমালা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
পত্রিকার প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে এনেছিলেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার, সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সামীউল আলম সরকার ও উর্বষী বড়ুয়া সীমি।
ডা. মোয়াররফ হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুশফিক উদ্দিন বখতিয়ার।