রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে চাঞ্চল্যকর সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলায় আসামি মারুফ রেজার বিচার শিশু আদালতে করার নির্দেশনা চেয়ে করা আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।
এর ফলে বিচারিক আদালতে এ মামলাটি চলতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
মঙ্গলবার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন দেওয়ান আব্দুন নাসের। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম।পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মারুফ রেজার আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে।
৩০ বছর আগের এ চাঞ্চল্যকর মামলাটি এখন বিচারিক আদালতে অভিযোগ গঠন পর্যায়ে রয়েছে। এ অবস্থায় সম্প্রতি আসামি মারুফ রেজা তার বিচার শিশু আইনে করার জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেন।
আসামিপক্ষের যুক্তি, ‘অপরাধ যখন সংঘটিত হয়েছে তখন আসামির বয়স ছিল ১৬ বছর ১০ মাস ২৬ দিন। সুতরাং ২০১৩ সালের শিশু আইন অনুযায়ী তার বিচার হতে হবে শিশু আদালতে। মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই আসামির বিচার হতে পারে না।’ তার এ আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত।
এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে গত ৭ অক্টোবর মারুফ রেজার পক্ষে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের শুনানী শেষে আদালত আজ উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।
সগিরা মোর্শেদ হত্যার ৩০ বছর পর ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করে গত বছরের ১৪ জানুয়ারি পুলিশের তদন্ত ব্যুরো (পিবিআই) চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
মামলার আসামিরা হলেন- নিহত সগিরা মোর্শেদের ভাশুর হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন, হাসান আলীর শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান ও সন্দেহভাজন ভাড়াটে খুনি মারুফ রেজা।
গত ৯ মার্চ অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন একই আদালত। সেদিনই অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১৫ মার্চ দিন ঠিক করা হয়। তবে করোনা পরিস্থিতিতে আদালত বন্ধ থাকায় শুনানি পিছিয়ে যায়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরসাইকেলে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতের সোনার চুড়ি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তিনি দৌঁড় দিলে তাকে গুলি করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সগিরা মোর্শেদ মারা যান।
ওইদিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরা মোর্শেদ সালামের স্বামী সালাম চৌধুরী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক জড়িত দুই জনকে শনাক্ত করলেও অজ্ঞাত কারণে মিন্টু ওরফে মন্টু ওরফে মরণ নামে একজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।
১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্য নেয়া হয় সাতজনের।
সাক্ষ্যে বাদীপক্ষ থেকে বলা হয়, তদন্তকালে আসামি মন্টু এবং তৎকালীন (১৯৮৯) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের নিকটাত্মীয় মারুফ রেজা গ্রেফতার হন। কিন্তু মারুফ রেজার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে মারুফ রেজার নাম আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন ঢাকার বিচারিক আদালত। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজা রিভিশন আবেদন করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
পরের বছর ২৭ আগস্ট জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। এ মামলার
সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সম্প্রতি বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নজরে আনলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ।
এরপর বিষয়টি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে তোলা হয়। আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেন। এরপরই বিষয়টি আলোচায় উঠে আসে।