সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়েছে অভিযোগ করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি।
প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে মঙ্গলবার চিঠিটি পৌঁছে দেয়া হয় বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ মহসিন কবির ও মার-ই-য়াম খন্দকার।
এক বিচারকের ছেলেকে সরাসারি হাইকোর্টে প্রাক্টিসের সুযোগ দিয়ে বার কাউন্সিলের গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিটের শুনানির সময় রিটকারী আইনজীবীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ করা হয়েছে।
‘আইনের শাসন বজায় রাখার স্বার্থে বার ও বেঞ্চের মধ্যে যেন কোনো ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ সৃষ্টি না হয়’ সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রধান বিচারপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বার নেতারা।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদকসহ সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সব সদস্যের সই করা চিঠিতে বলা হয়, ‘দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। আইনজীবী ও বিচারকের মধ্যে পারস্পপারিক শ্রদ্ধাবোধ থাকলেই শুধু আদালত সুষ্ঠুভাবে তার মহান দায়িত্ব পালন করতে পারেন।’
চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘আদালত সহনশীলতার সঙ্গে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে দু একটি আদালতে মামলার শুনানি চলাকালে সুপ্রিমকোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবীদেরকে বিভিন্নভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা অত্যন্ত দু:খজনক। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহারের জন্য যুগ যুগ ধরে গড়ে তোলা বার ও বেঞ্চের মধ্যে সু সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে বলে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মনে করে।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ৮ নভেম্বর রিট পিটিশন নম্বর ১৩১৪২/২০১৯ এর শুনানি শেষে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির দুইজন সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এবং ইশরাত হাসানের বিরুদ্ধে ১০০ টাকা করে জরিমানা এবং আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করা হয়েছে। শুনানিকালে আইনজীবীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। যা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মামলা দায়ের বা পরিচালনার কারণে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে জরিমানা ধার্য কিংবা আদালত অবমাননার রুল ইস্যুর ক্ষেত্রে মহামান্য আদালতের কাছে সমিতি আরও সহনশীলতা প্রত্যাশা করে।’
আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরেও হাইকোর্টের একজন বিচারকের ছেলে মো. জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে প্রাক্টিসের সুযোগ দেয়া গেজেটের বৈধতা প্রশ্নে করা রিটটি গত ৮ নভেম্বর খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। এর ফলে জুম্মান সিদ্দিকী হাইকোর্টে প্রাক্টিসের বৈধতা পান।
ওই রায়ের আগে হাইকোর্ট রিটকারি আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও ইশরাত হাসানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে এবং তাদের প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহ র হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালত বলেছে, এ ধরনের রিট করার জন্য রিটকারীদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট পরিমাণে জরিমানার আদেশ হওয়া উচিত। কিন্তু তাদের বয়স বিবেচনায় ১০০ টাকা করে জরিমানা করা হলো।
এ রায়ের পর আইনজীবীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সোমবার সুপ্রিমকোর্টের বেশ কিছু আইনজীবী প্রতীকী প্রতিবাদ জানান। দুই আইনজীবীর জন্য ১ টাকা করে একটি বাক্সে জমা করা হয় এবং ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন বেশ কয়েকজন আইনজীবী।
রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদনও করা হয়েছে।
আদালতে জুম্মান সিদ্দিকীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। রিটের পক্ষে ছিলেন রিটকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।