১০ নভেম্বর ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস। ৩৩ বছর আগে ১৯৮৭ সালের এইদিনে বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নীপাত যাক’ স্লোগান ধারণ করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন নূর হোসেন।
তার রক্তদানের মধ্য দিয়ে তৎকালীন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং অব্যাহত লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসকের পতন ঘটে।
নূর হোসেনের পরিবার এখন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সকল শহীদের পরিবারের জন্য জাতীয় সম্মাননা চান। একই সঙ্গে চান রাজনীতিতে সব দলের অংশগ্রহণও।
বর্তমান সময়ের রাজনীতি নিয়ে শহীদ নূর হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় ভাই আলী হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলই গণতান্ত্রিক আন্দোলন করেছে একত্র হয়ে। এই ধারাটি তারা ঠিকমতো ধরে রাখতে পারেনি। দুটো দলের মধ্যে যেন দ্বন্দ্ব না থাকে। যদি দুটো দলই সুন্দরভাবে দেশকে গড়ে তাহলে নূর হোসেনের মতো যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে মারা গেছেন তাদের আত্মা শান্তি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা এদেশের গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন, অনেকেই তাদের সম্মান দিতে কুন্ঠাবোধ করে।’ ‘শুধু আমার ভাই না, দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বহু মানুষ মারা গেছেন। তাই সরকারের কাছে চাওয়া একটাই, এ দেশে যারাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন তাদের সবার পরিবারকে একদিন অনুষ্ঠান করে যেন জাতীয় সম্মাননা দেওয়া হয়।’
জাতীয় পার্টির নেতা মশিউর রহমান রাঙা গত বছর যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখন তা নিয়ে আপনার পরিবার থেকে আর কোনা বক্তব্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুধু মশিউর রহমান রাঙা নন, এরশাদও শহীদ নূর হোসেনকে পাগল বলেছিলেন।’
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর দেশের দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একত্র হয়ে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের লক্ষ্যে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করে। এর আগে এরশাদ ১৯৮২ সালে একটি সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৭ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন। কিন্তু বিরোধী দলগুলো তাঁর এই নির্বাচনকে জালিয়াতি বলে অভিযুক্ত করে। তাঁদের একমাত্র দাবি ছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা।
অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় একটি মিছিলে নূর হোসেন অংশ নেন এবং প্রতিবাদ হিসেবে বুকে পিঠে সাদা রঙে লিখিয়ে নেন: ‘স্বৈরাচার নীপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক।’ মিছিলটি ঢাকা জিপিওর সামনে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি আসলে পুলিশের গুলিতে নূর হোসেনের মৃত্যু হয়।
শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু সোমবার এক ভিডিওবার্তায় ওই দিনের স্মৃতিচারণ করেন।
তিনি নূর হোসেন, নুরুল হুদা বাবুলসহ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে তাদের এই অবদান জাতি চিরকাল মনে রাখবে।’