‘আমার কাছে কর্মরত অবস্থায় আনিসুলের কোনো অস্বাভাবিক আচরণ আমার চোখে পড়েনি।’
জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম সম্পর্কে এই মন্তব্যে করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার জাকির আলম মজুমদার।
সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে এ কথা বলেন।
রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে কর্মচারীদের পিটুনিতে আনিসুলের মৃত্যু হয় বলে স্বজনদের অভিযোগ। তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনারের (এসি) দায়িত্বে ছিলেন।
উপকমিশনার আরও জানান, ‘তা ছাড়া সে (আনিসুল) বেশ কর্মঠ ব্যক্তি ছিল। আমি তাকে ভালো অফিসার হিসেবে পেয়েছি। আনিসুলের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা স্পষ্ট মার্ডার। আমরা এই ঘটনার বিচার এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থা বোধ করলে ৮ নভেম্বর ১০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি নেন আনিসুল। তার বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল থেকে ঢাকায় যান। ৯ নভেম্বর তিনি প্রথমে ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যান। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় সেখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেই আনিসুলকে পরবর্তী সময়ে আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেয়া হয়।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আনিসুলের চিকিৎসক বোন ও চিকিৎসক ভগ্নিপতি তার সঙ্গে ছিলেন। মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় আনিসুল বাথরুমে যাওয়ার কথা বললে তাকে নিয়ে তার বোন হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় যান। এ সময় হাসপাতালের ৪/৫ জন লোক তাকে তার বোনের কাছ থেকে নিয়ে যান। এর ১৫ মিনিট পর হাসপাতালের লোকজন আনিসুলের বোনের কাছে এসে তার অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা জানান। কক্ষে গিয়ে তার বোন দেখতে পায় আনিসুল মৃত।
সোমবার দুপুরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে আনিসুলকে পিটুনির সিসিটিভির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এতে দেখা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী আনিসুলকে জোর করে একটি কক্ষে ঢোকাচ্ছেন। সেখানে ছয়জন তাকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেছেন। আরও দুই জন তার পা চেপে ধরেছেন এবং মাথার দিকে থাকা দুই জন কনুই দিয়ে তাকে আঘাত করছেন।
হাসাপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় একটি কাপড় দিয়ে আনিসুলের দুই হাত বাঁধা হয়। চার মিনিট পর আনিসুলকে যখন উপুড় করা হয়, তখন তার কোনো সাড়া-শব্দ ছিল না। একজন কর্মচারী তার মুখে পানি ছিটালেও সাড়া দিচ্ছিলেন না আনিসুল।
তার ভাই রেজাউল করিম বলেন, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে ভুগছিলেন আনিসুল। কিন্তু সেগুলো গুরুতর নয়। হাসপাতালের কর্মচারীদের পিটুনিতেই তার মৃত্যু হয়েছে।
আনিসুল করিম গাজীপুর সদরের বরুদার মুসলিমাবাদ রোড এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। স্ত্রী ও তিন বছরের ছেলে সন্তানকে নিয়ে বরিশাল নগরের বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
আনিসুলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান। এক বিবৃতিতে তার আত্মার শান্তি কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তিনি।