বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অসময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ কেন?

  •    
  • ১০ নভেম্বর, ২০২০ ০৮:৪৬

সাধারণত বর্ষার রোগ হলেও এবার নভেম্বরের শুরুতে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অক্টোবরে বৃষ্টি হওয়ায় এডিসের প্রজননক্ষেত্র বেড়েছে।     

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই নতুন আতঙ্ক হয়ে এসেছে ডেঙ্গু। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে এডিস মশাবাহিত এই রোগটির প্রকোপ দেখা দেয়।

এবার বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল না বললেই চলে। অথচ শীতের শুরুতে নভেম্বর মাসের প্রথম নয় দিনে সারা দেশে ১১৫ জন ব্যক্তির ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে।

এর মধ্যে ৮ নভেম্বর রোববার এক দিনে সর্বোচ্চ ২৪ জন ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর সারা মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৬৩ জন। আর সেপ্টেম্বরে ৪৭ জন।

গত কয়েক বছরের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার হিসাব বলছে, বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কখনোই অক্টোবর কিংবা নভেম্বর মাসে চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকে না। গত বছরেও সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছিল আগস্ট মাসে। এরপর সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ আস্তে আস্তে কমে আসতে থাকে।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, চলতি বছর অক্টোবর মাসে ভারি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে গরমের প্রকোপ ছিল অনেক বেশি, যা ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। ফলে মশা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাসার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর যে ধরন, তা এবারের অক্টোবর-নভেম্বর মাসের ধরনের সঙ্গে মিলছে না। সাধারণত অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যায়, নভেম্বরে যা আরও কমে আসে। কিন্তু এবার আমরা নভেম্বরেও প্রচুর রোগী পাচ্ছি।’

এর কারণ বিশ্লেষণ করে এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার অক্টোবরে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলো, তাতে অনেক বেশি এডিস মশার প্রজননস্থল তৈরি হয়েছে। এ কারণে এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ার পাশাপাশি রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।’

দুই দশক আগে ২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। এরপর গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয় ও মারা যায়। সরকারি হিসাবেই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল লাখের বেশি। মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। তবে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্য অনুসারে এই সংখ্যা আরও বেশি।

এ কারণে এবারও ডেঙ্গু নিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছিল। তাই স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বোচ্চ ‍গুরুত্ব দিয়ে বছরব্যাপী মশকনিধন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরুর আগেই গত মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাসের কারণে ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। টানা দুই মাস চলে লকডাউন পরিস্থিতি। এরপর মানুষ বাইরে বের হতে শুরু করলেও পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি।

হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৯ নভেম্বর সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৪২ জন রোগী। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ১৯৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ জন, মার্চে ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে মাসে ১০ জন, জুনে ২০ জন, জুলাইতে ২৩ জন ও আগস্টে ৬৮ জন।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬২ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকারই ৬০ জন।

এ ছাড়া ডেঙ্গুতে মৃত্যু সন্দেহে এ পর্যন্ত পাঁচজনের তথ্য পাঠানো হয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর)। এর মধ্যে দুই জনের তথ্য পর্যালোচনা করে একজনের মৃত্যু ডেঙ্গুর কারণে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর।

 ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তৎপরতা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরের শুরু থেকেই দুই সিটি করপোরেশন কম-বেশি তৎপর ছিল। তবে চলতি অক্টোবরে হঠাৎ ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় গত ২ নভেম্বর থেকে বিশেষ মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

অভিযানের সপ্তম দিনে সোমবারও ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৮০টি স্থাপনায় এডিসের লার্ভা মিলেছে। এ ছাড়া ৮ হাজার ৪০০টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেছে।

অভিযানে কোথাও এডিস মশার লার্ভা কিংবা বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেলে তার ছবি, ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে একটি অ্যাপে সংরক্ষণ হচ্ছে বলে জানান ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন। তিনি বলেন, অ্যাপে সংরক্ষিত তথ্য দিয়ে অভিযান শেষে একটি ডেটাবেজ তৈরি করা হবে পরবর্তী অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য।

এর বাইরে ডিএনসিসি এলাকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে সেই হাসপাতাল ও রোগীদের বাড়ির আশপাশে ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান মামুন।

এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি) নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।

এত কিছুর পরেও অসময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার জন্য অকাল বৃষ্টি ও আবহাওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয়কে সামনে আনেন কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাসার।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটা মূলত কিউলেক্স মশা নির্ভর। ড্রেন-ডোবা-নর্দমা অর্থাৎ পঁচা পানিতে যে মশা হয় তার ওপরেই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটা বেশি জোরদার করা হয়।’

এ ছাড়া কবিরুল বাসার মনে করেন, দুই সিটির মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বিজ্ঞানসম্মতভাবে করা হচ্ছে না।

তার মতে, ‘মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে হবে বছরব্যাপী। এখানে কোনো গ্যাপ দেওয়া যাবে না। একটা মশার জীবনচক্র সম্পন্ন হতে ১৫ দিন সময় লাগে।

‘একটা নির্দিষ্ট জায়গায় প্রতি ১৫ দিন পরপরই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া চালু রাখতে হবে। যদি এটা ১৬ দিনে হয় তাহলেই কিন্তু মশা উড়ন্ত হয়ে গেল। এ জন্য সাইকেলটা (চক্র) নিয়মিত মেইনটেইন করতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর