সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি বরখাস্ত উপপরিদর্শক আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুরে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় তাকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছেন সিলেট জেলা পুলিশের (কানাইঘাট সার্কেল) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুল করিম।
এএসপি জানান, সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় আকবরকে।
‘ভারতে পালানোর সময় সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর সিলেটে নিয়ে আসা হচ্ছে’-বলেন এএসপি করিম।
এ নিয়ে এই মামলায় গ্রেফতার হলেন পাঁচ জন।
গত ১০ অক্টোবর সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আটক রায়হান আহমদ পরদিন ভোরে হাসপাতালে মারা যান। ওই ফাঁড়ির ইনচার্জ ছিলেন আকবর।
রায়হানের বাবাকে সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল, তাকে ছিনতাইকারি সন্দেহে আটক করে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকাবাসী।
তবে প্রাথমিক তদন্ত ও পুলিশের বক্তব্যে সন্দেহ তৈরি হয়। যেখানে গণপিটুনির কথা বলা হচ্ছিল, সেখানে এই ধরনের কিছুই হয়নি বলে জানায় এলাকাবাসী।
ওই এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজেও গণপিটুনির কোনো প্রমাণই মেলেনি বলে জানান স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম।
রায়হানের গায়ে নির্যাতনের অজস্র চিহ্ন দেখে তার পরিবার তোলে হত্যার অভিযোগ। করে মামলা। পরে ময়নাতদন্তেও জানা যায়, এই যুবককে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তাকে পেটানো হয়েছে কয়েক ঘণ্টা ধরে।
রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী গত ১২ অক্টোবর কোতয়ালি থানায় নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। সেদিনই এসআই আকবর হোসেনসহ চার জনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন জনকে প্রত্যাহার করা হয়।
ততক্ষণে রায়হান পালিয়ে যান। আর তাকে পালাতে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগে ফাঁড়ির এসআই হাসান উদ্দিনকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
১৪ অক্টোবর এ মামলার তদন্ত ভার পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে পিবিআই বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রায়হান সিলেট নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি দুই বছর ধরে সিলেট জেলা স্টেডিয়াম মার্কেটের এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারীর কাজ করতেন।
পরিবারের অভিযোগ, ফাঁড়ি থেকে ফোন দিয়ে রায়হানকে ছাড়িয়ে আনতে তাদের কাছে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল। টাকা না পেয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্তে জানা গেছে, তার নখ তুলে ফেলা হয়েছিল।
বিচার দাবিতে রায়হানের মা সালমা বেগম গত ২৫ অক্টোবর সিলেট শহীদ মিনারে আমরণ অনশনে বসেন। পরে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার অনশন ভাঙান।