বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধুলাবালির ‘সোনায়’ সুখী বাবুল

  •    
  • ৯ নভেম্বর, ২০২০ ০৯:২৯

বাবুল মিয়া বলেন, ‘খুব মজা। ধুলাবালিতে গরিবের কিছু হয় না।’

রাস্তার ধুলাবালিতে মিশে থাকা লোহার গুঁড়োই যেন বাবুল মিয়ার কাছে সোনা। সে সোনার খোঁজে প্রতিদিন সকাল ৮টার মধ্যেই বের হন বস্তি থেকে। বিকেল চারটা পর্যন্ত এ সড়ক ও সড়ক ঘুরে সেই সোনা কুড়ান তিনি। দিন শেষে বেচে যা পান তাতেই খুশি ৩৫ বছর বয়সী এই যুবক।

বাবুল মিয়া মাসখানেক থেকে আছেন ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের পাশের বস্তিতে। রোববার তার সঙ্গে দেখা হয় ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের পাশের মহাসড়কে।   

নিউজবাংলাকে বাবুল মিয়া জানান, তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি। বাড়িতে আছেন তার দুই বোন আর বৃদ্ধ বাবা-মা। তিনি সাংসারের বড় সন্তান। তাই পড়ালেখা হয়নি।

অল্প বয়সেই গ্রামে একটি চা-পান-সিগারেটের দোকান দিয়েছিলেন বাবুল। তবে দেশে করোনা আসার পর সে দোকানও বন্ধ হয়ে যায়।

বাবুল জানান, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার একপর্যায়ে কোনো কাজ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে চলে আসেন ঢাকায়। ওঠেন বস্তির এক ঘরে; ভাড়া মাসে ৩০০ টাকা।

সেখানে থেকে প্রথমে শুরু করেন প্লাস্টিকের বোতল কুড়ানোর কাজ। দিন শেষে তা বিক্রি করতেন ভাঙাড়ির দোকানে। পেতেন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। কিন্তু দিনে তার খাওয়া-দাওয়া বাবদই চলে যেত ৯০-১০০ টাকা। ফলে বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারতেন না।

এমন পরিস্থিতিতে ভাঙাড়ির দোকানদারের কাছে পরামর্শ চান কী করা যায়। তিনি তাকে বুদ্ধি দেন লোহা বিক্রির ব্যবসা করার। কারণ প্লাস্টিকের চেয়ে লোহার দাম বেশি।

গুঁড়ো লোহা কুড়ানোর জন্য দুটি চুম্বক কিনতে আড়াই হাজার টাকাও ধার দেন ভাঙাড়ির দোকানদার। শর্ত দেন অন্য কোথায় মাল বিক্রি করা যাবে না। দিলেই চুম্বক দিয়ে দিতে হবে।

তারপর ১৫ অক্টোবর সকাল-সকাল বেরিয়ে পড়েন একটি ঝুড়ি (চালনি), একটি বস্তা আর চুম্বকের চাকা দুটি নিয়ে। ঘুরতে থাকেন যেসব সড়কে পুরনো লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি চলাচল করে সেখানে। দিন শেষে মেলে ১৫ থেকে ২০ কেজি গুঁড়ো ও টুকরা লোহা। তা নিয়ে ফেরেন সেই ভাঙাড়ির দোকানে। সেখানে প্রতি কেজি গুঁড়ো লোহা ২০ টাকা আর টুকরা লোহা ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

সারা দিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ধুলাবালি থেকে পয়সা উপার্জন করতে কেমন লাগে- নিউজবাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে বাবুল মিয়া বলেন, ‘খুব মজা। ধুলাবালিতে গরিবের কিছু হয় না।’

করোনার সময় মাস্ক পরেন নাই কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনা-মরোনা চিনি না।’

সব মিলিয়ে কেমন আছেন জানতে চাইলে বাবুল মিয়া হাসতে হাসতে বলেন, ‘আগের থাইক্যা খুব বালা আছি। খুব বালা। পান খাওনি? তুমি এট্টা পান খাও।’

বাবুল মিয়া জানান, গত ২০ দিন গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়েছে তার। খাওয়া-দাওয়া বাবদ খরচ হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। বাকি টাকা জমিয়ে রাখছেন বাড়ির জন্য।

তিনি জানান, ওই ভাঙাড়ির দোকানদার তার মতো আরও কয়েকজনকে চুম্বক কিনে দিয়েছেন একই শর্তে অন্য দোকানে মাল দেওয়া যাবে না। প্রত্যেকেরই এলাকা ভাগ করা। দিন শেষে তারা সবাই আসেন তার দোকানে।

এ বিভাগের আরো খবর