রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছোট দুই শিশুকে তাদের ঘরে ফিরতে দিচ্ছিলেন না চাচা। পুলিশ নিরুপায়। গণমাধ্যমের খবর দেখে মধ্যরাতে বসল কোর্ট। দুই ঘণ্টার মধ্যে শিশুরা ফিরল ঘরে।
একই রকম চিত্র গুলশানের একটি বাড়িতেও। সেখানে দুই বোনের বাড়িতে প্রবেশে বাধা হয়েছিলেন সৎ মা। কেউ অভিযোগ জানায়নি। কিন্তু গণমাধ্যমের খবর দেখে হাত বাড়ায় হাইকোর্ট। আদালতের হস্তক্ষেপে বাসায় ফেরে পিতা হারা দুই বোন।
নয় বছরের কম শিশুকে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা। সেখানেও একই চিত্র। গণমাধ্যমের খবর দেখে শিশু, পুলিশ, শিশু আদালতের বিচারককে ডেকে পাঠায় উচ্চ আদালত। তুলাধুনা করা হয় ‘অবিচারের’।
‘দেশে বিচার নেই’ বলে সমাজে অনেকে মনে করেন। কিন্তু এর বিপরীতে গত এক মাসে এই তিনটি ঘটনা। আইন অঙ্গনে যারা কাজ করছেন, তারা বলছেন, বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে কতগুলো বদ্ধমূল ধারণা কাজ করে। অনেকে সেগুলো প্রচারও করেন। তা সমাজের জন্য ভালো না।
এই তিনটি ঘটনার উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা বলেন, আদালতের এ ধরনের পদক্ষেপ মানুষের মনে ‘ন্যায়বিচার’ সম্পর্কে ধারণা পাল্টাতে সহায়ক হবে।
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাতে কোর্ট বসে এ ধরনের আদেশ প্রদান করায় আমরা খুবই খুশি। এটি প্রশংসিত উদ্যোগ। আশা করি এটা চলমান থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে প্রায় সময়েই রাতে কোর্ট বসে রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়ে আদেশ দেয়া হতো। তবে এগুলো নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এখন আদালত আমাদের পথ দেখাচ্ছে সুশাসনের।’
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এটি একটি বড় পদক্ষেপ। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আদালতের এই ভূমিকা প্রশংসাযোগ্য।
‘ওই রাতে যদি আদালত আদেশ না দিতো, হয়তো শিশু দুটিকে রাতে বাড়ির বাইরে থাকতো হতো। তাছাড়া তারা আদালতে আসতে চাইলেও সেটি সময়সাপেক্ষ হতো। বরং আদালতের তাৎক্ষণিক আদেশে শিশু দুটি ঘরে প্রবেশ করতে পেরেছে এটাই আইনের শাসন।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় জিনিস হলো মানুষের বিচার পাওয়া। বিচারপ্রার্থীদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া। বিচারপ্রার্থীদের অসুবিধা দূর করা। সেই কাজটা হাইকোর্ট বিভাগ করেছে। আমি সেটাকে স্বাগত জানাই। আমি তাদেরকে ধন্যবাদ দেই।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটার থেকে নিশ্চয় কিছু শিখব। মানুষ যাতে দ্রুত বিচার পায়। আবার বেশি দ্রুত করতে গিয়ে বিচারটা যাতে নষ্ট না হয়, সেই ব্যাপারটাতেও লক্ষ্য রাখতে হবে।’
ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫ ধারায় বিচারকদের ‘জাস্টিস অব পিস’-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং যখন তখন আদালত প্রতিষ্ঠার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে: ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ পদাধিকারবলে সমগ্র বাংলাদেশের জাস্টিসেস অব দ্য পিস এবং দায়রা জজ ও মুখ্য বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটগণ পদাধিকারবলে তাহাদের অধিক্ষেত্রভূক্ত এলাকার জন্য জাস্টিসেস অব দ্য পিস থাকিবেন।’
এ ছাড়া সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদেও হাইকোর্টকে সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে কোর্ট বসার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্ট রুলস ২০১৩ অনুযায়ী রাতেও কোর্ট বসার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।