‘আমি আমার নিরাপরাধ ছেলের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। কেন আমার ছেলেকে এভাবে হত্যা করা হলো রাস্তার মধ্যে? শুধুমাত্র দুই বাসের চালকের খামখেয়ালির কারণেই আমার ছেলে মারা গেছে। তাই চালকদের জন্য কঠোর আইন করা হোক, যাতে তারা এভাবে আর কোনো মায়ের বুক খালি না করে।’
কথাগুলো বলছিলেন সাভারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাকিব আহমেদের বাবা ইমান উদ্দিন। রোববার নিরাপদ সড়কের দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
চার দিন আগে বাসের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান নাকিব আহমেদে। ছেলের মৃত্যুতে যখন পুরো পরিবার শোকে মুহ্যমান, তখন বাবা চাইছেন সড়ক দুর্ঘটনায় আর যেন কেউ প্রাণ না হারায়। আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। তাইতো সচেতনতামূলক পোস্টার হাতে সড়কে দাঁড়ান হতভাগা এই বাবা।
রোববার বেলা ১২ টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় ছেলের মৃত্যুর স্থানে এসে হাজির হন নাকিবের বাবা ইমান উদ্দিন। এ সময় নিরাপদ সড়কের দাবিতে তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধন করেন নিহতের সহপাঠীরাও।
নিহত শিক্ষার্থী নাকিব আহমেদ আশুলিয়ার চিত্রশাইল কাঁঠালতলার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতক পর্বের শিক্ষার্থী ছিলেন।
ইমান উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। সে বুধবার সকালে মোটারসাইকেলে করে আশুলিয়ার ইটখোলা এলাকায় যাচ্ছিল। বাইপাইল সেতু পার হলে সড়কে ইতিহাস পরিবহনের একটি বাস এলেমেলোভাবে দাঁড় করানো দেখে ডান দিক দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পেছন থেকে শতাব্দী পরিবহনের একটি বাস ইতিহাস পরিবহনের বাসটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করলে সেই বাসটিও জোরে টান দেয়। দুই বাসের এই প্রতিযোগিতার এক পর্যায়ে শতাব্দী পরিবহনের বাসটি আমার ছেলেকে চাপা দেয়, যা সড়কের পাশের দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা “নিরাপদ সড়ক চাই” বলে স্লোগান দিয়ে সারা জীবন কাঁদলেও কোনো দিন তা হবে না। যতদিন পর্যন্ত সরকার ও প্রশাসন আন্তরিক না হবে, ততদিন পর্যন্ত এই দেশে নিরাপদ সড়ক আমরা পাব না। আমাদের দেশের গাড়ির শরীরে অসংখ্য আঁচড় থাকলেও পুলিশকে তাদের কোনো কৈফিয়ত দিতে হয় না।
পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা কেন করা হয়নি সে বিষয়ে ইমান উদ্দিন বলেন,‘মামলা অথবা অভিযোগ করব, এতে কি হবে? এ রকমতো কত অভিযোগ হয়। আমরাতো বিচার পাই না। শেষ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা জরিমানা হয়।’
মানববন্ধনে নিহতের সহপাঠীরা বলেন, ‘আমাদের বন্ধু সড়কে বাসচাপায় হত্যা করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অদক্ষ চালকদের ওভারটেকিংয়ের কারণে এভাবে একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে প্রাণ দিতে হলো। আর কত জন মারা গেলে সড়কে চলাচলে মানুষের নিরাপত্তা আসবে আমাদের জানা নেই। এ জন্য সড়কে প্রশাসনের নজরদারি আরো জরুরি।’